দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ০৮ আগস্ট, ২০১৯

মেহেরপুরে ৫৯ হাজার ব্ল্যাক বেঙ্গল প্রস্তুত

‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গট’ (কালো ছাগল) জাতের ছাগল কিনতে ভিড় বেড়েছে মেহেরপুরের সদর উপজেলার বারাদি হাটে। স্বাদে-গুণে ভালো হওয়ায় এই ছাগলের কদর বাড়ছে দিন দিন। প্রতিবার মতো দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ব্লাক বেঙ্গল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এই হাট থেকে।

এবছর মেহেরপুর ৫৯ হাজার ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল তৈরি আছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ব্যবসায়ীরা জানান, দাম নাগালের মধ্যে থাকায় এবার এই ছাগলের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি লাভবান হচ্ছেন তারা।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল উৎপাদনে দেশের প্রথম স্থানে আছে মেহেরপুর জেলা। জাতিসংঘের ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও) ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তির মূল্যায়নে বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল গট বিশে^র অন্যতম সেরা জাত হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে এই ছাগল ‘কুষ্টিয়া গ্রেড’ হিসেবে পরিচিত। মূলত কুষ্টিয়া ও তার আশপাশের জেলায় এই ছাগলের পালন বেশি হয় বলে এই নামকরণ করা হয়।

বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, বিশে^র যে পাঁচটি দেশে দ্রুত হারে ছাগল উৎপাদন বাড়ছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও আশপাশের তিন জেলায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন বেশী হয়ে থাকে। এই ছাগলগুলো স্বতন্ত্র জাতের। ঘরে ঘরে পালন হয় বিধায় এসব ছাগল এখনো শংকরায়ন হয়নি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের স্থানীয় জাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল মানের দিক থেকে বিশ্বসেরা হিসেবে স্বীকৃত। ঈদুল ফিতরে কোরবানির জন্য বিক্রি হওয়া ছাগলের ৯০ শতাংশই জাত। জেলার প্রায় প্রতিটি পরিবারে ব্ল্যাক বেঙ্গল পালন হয়। মেহেরপুরে ১ লাখ ৬ হাজার পরিবারে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮৮টি ছাগল পালন হচ্ছে। এর মধ্যে এবার কোরবানির জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল আছে ৫৯ হাজার। ছাগলের চাহিদা থাকায় মেহেরপুর জেলার পশু হাট থেকে ট্রাক ভর্তি করে ছাগল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্ব জেলাগুলোতে নেওয়া হয়।

সরেজমিনে সদর উপজেলার বারাদী ছাগলের হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল জায়গাজুড়ে কালো ও ধূসর রঙের ছাগলের বাহার। এর মধ্যে মাথায় শিংহীন মাঝারি আকারের ছাগলের সংখ্যা বেশি। কয়েক হাজার ছাগল হাটে উঠেছে। শত শত বেপারি বাইরে থেকে ছাগল কিনতে গেছেন। অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছাগলগুলোর ডাকচিৎকারও কম। এ কারণে ৫০ ছাগলটির দড়ির বাঁধন নিয়ন্ত্রণ করছেন একজনই।

বাজারে ছাগল বিক্রি করতে আসা গৃহস্থ ও ব্যবসায়ি জানান, মেহেরপুরের ব্লাক বেঙ্গলের মাংস যেমন সুস্বাদু, তেমনি এই ছাগলের চামড়া ও হাড় হয় খুবই উন্নত মানের। চামড়া দিয়ে ব্যবহার্য্য দামি পণ্য তৈরি হয়। তাই চামড়াও বিক্রি হয় চড়া দামে। তারা জানান, এই ছাগল খাদ্য হিসেবে নেপিয়ার ঘাস, ধান গমের গুঁড়ো, কাঁঠালপাতা খেয়ে থাকে।

বড় বারাদি হাটের আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, ছোট-বড় মিলিয়ে ২৭টি ছাগলের হাট রয়েছে এ জেলায়। কোরবানির সময় ৬ থেকে ২০ হাজার থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা দামেরও ছাগল পাওয়া যায় এ সমস্ত হাটে।

ছাগল বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের জয়নাল আবেদিন (৫৮) জানান, এ বার ২০টা ছাগল বিক্রি করবেন হাটে। প্রতি ঈদে তিনি নিজ বাড়িতে পালন করা ছাগল বিক্রি করেন।

চট্টগ্রাম থেকে ছাগল কিনতে আসা ব্যাপারী ফজলুল হক জানান, এই জেলার ছাগলের মাংসের স্বাদ এবং গন্ধ একেবারেই ভিন্ন। তাই চাহিদাও বেশি। লাভও ভালো হয়। এবার ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের এক হাজার ছাগল কেনার ইচ্ছের কথা জানান তিনি।

বারাদি হাটের ইজারাদার ইস্রাফিল হোসেন জানান, ঈদ সামনে রেখে শুধু এই হাট থেকেই এবার ৬০ হাজার ছাগল বিক্রির টার্গেট রয়েছে। প্রতি হাটে অন্তত ৩ হাজার ছাগল বিক্রি হয়।

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই ছাগল বছরে চারটি বাচ্চা দেয়। একটু যতœ নিলে কৃষকরা ভালো লাভ পান। এবার কোরবানির জন্য মেহেরপুরে ৫৯ হাজার ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল মজুদ আছে বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close