তুহিন আহমদ, মহানগর (সিলেট)

  ১৭ জুলাই, ২০১৯

সিলেটের দেড় কোটি টাকার প্রথম ফুটওভারব্রিজ

৪০ লাখ টাকা বাঁচাতে ‘ভাঙাড়ির দরে’ সরঞ্জাম বিক্রির সিদ্ধান্ত!

সিলেট নগরবাসীর চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কোর্ট পয়েন্টে নির্মিত নগরীর প্রথম ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার কম হওয়ায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ছোট পয়েন্ট হওয়ায় হেঁটেই সড়ক পারাপার হন পথচারীরা। অলস পড়ে থাকা ওভারব্রিজটি নগরীর দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরে স্থাপনে হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট পয়েন্টের ফুটওভার ব্রিজটি ভেঙে সরঞ্জাম বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রকৌশল বিভাগ ২২ লাখ টাকায় সব সরঞ্জামাদি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, সিলেটের কোর্টপয়েন্টে চারটি সড়কের সংযোগ স্থল। এর পাশেই অবস্থিত রেজিস্ট্রারি মাঠ। সেখানে বেশিরভাগ রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সময় পুরো কোর্টপয়েন্টে যানজট লেগে যেতো। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাবি তোলা হলে ২০০৮ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সেখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন। অর্থমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ১ কোটি ৬৭ লাখ ব্যয়ে ফুটওভার ব্রিজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ইস্পাত অ্যান্ড প্রকৌশল বিভাগের নিজস্ব কোম্পানী ‘চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড’। ২০১৫ সালের ২১ মে সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। আর ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজ শেষে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী।

নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যানজটমুক্ত নগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্রিজটি নির্মাণ করা হলেও চিত্র থেকে যায় একই। পথচারীদের উদাসীনতা অলস পড়ে থাকে ব্রিজটি। একসময় মাদক সেবনের অভয়াশ্রম হয়ে উঠে এটি। পরবর্তীতে সবকিছু বিবেচনা করে ও সার্বিক বিষয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে অবহিত করলে ব্রিজটি কোর্টপয়েন্ট থেকে সরিয়ে নিয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হুমায়ুন রশিদ চত্বরে স্থানান্তরের কথা জানান তিনি। সিসিক প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, ব্রিজটি পুরোপুরি স্থানান্তর করতে হলে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে আরো ৭৫ লাখ খরচ দিতে হবে। পাশাপাশি ব্রিজটির সরঞ্জামাদি ক্রয় বাবদ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ২৫ লাখ টাকা দিবে। এছাড়া সবমিলিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে আরো ৪০ লাখ টাকার মতো। আর এই আথির্ক ক্ষতি যাতে না হয় সেই কারণে ব্রিজটির সরঞ্জামাদি অন্যত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে জানায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হুমায়ুন রশিদ চত্বরে ব্রিজটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সিসিক প্রকৌশল দপ্তর গত ২০ জুন দরপত্র নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়। ৭ জুলাই ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। ওইদিন পর্যন্ত প্রত্যাশিত দরদাতা না পাওয়ায় সিলেটের কাজীর বাজারের ৭৫ জন ভাঙারি ব্যবাসয়ীর সমন্বয়ে একটি গ্রুপকে ২২ লাখ টাকায় ব্রিজটির সরঞ্জাম ক্রয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে সিসিক প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ‘ব্রিজটির সরঞ্জামাদি ২২ লাখ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা সর্বশেষ পর্যায়ে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেবো। পুরাতন সরঞ্জামাদি দিয়ে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে ব্রীজটি স্থানান্তর করা হলেও প্রায় ৪০ লাখ টাকা ক্ষতি হবে সরকারে। এই আর্থিক ক্ষতি বাঁচানোর জন্যই ব্রীজটির সরঞ্জামাদি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়।’ কোর্টপয়েন্টে ফুটওভার ব্রীজটির সরঞ্জামাদি বিক্রি করে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে নির্মাণ করে হবে নতুন ব্রীজ। সেক্ষেত্রে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের হিসাব দেওয়ার পরই বোঝা যাবে কত খরচ পড়বে। সেই ব্রিজ নির্মাণে এমনটাও জানিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এই প্রধান প্রকৌশলী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close