মাইনুদ্দীন রুবেল, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

  ০৯ জুলাই, ২০১৯

মেঘনার ভাঙনে আশুগঞ্জের চরসোনারামপুর

শঙ্কায় পাঁচ শতাধিক পরিবার ঝুঁকিতে বিদ্যুৎ গ্রিডলাইন

মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জের চরসোনারামপুরের চর। কয়েক বছরে ভাঙনের তীব্রতায় বিলীন হয়ে গেছে চরের পূর্ব দিকের একটি বড় অংশ। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীড লাইন। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শীঘ্রই চর মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চরে বসবাসকারী প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার।

চরবাসী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা এলেই ভাঙতে শুরু করে চার। নদী শাসন নেই। এছাড়া প্রভাবশালীরা চর এলাকায় ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এই ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুইশ বছর আগে আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠে জনবিচ্ছিন্ন চরসোনারামপুর গ্রাম। এটি আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড। প্রায় তিন থেকে চার হাজার মানুষ এই চরে বাস করে। এখানে যোগাযোগের একমাত্র অন্যতম মাধ্যম ইঞ্জিন চালিত নৌকা।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, চরটি ঘনবসতিপূর্ণ। চরের পূর্ব দিকের খালি জায়গার বিরাট একটি অংশ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিনিয়তই পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিক দিয়ে চর ভাঙছে। চরের পূর্ব দিকের মাঝখানে আশুগঞ্জের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি বড় টাওয়ার। এটিই আশুগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডের লাইন।

চরের পূর্ব দিকের বাসিন্দা ভরত দাস, প্রদীপ দাস, শ্যামল চন্দ্র দাস, সুপ্রভা রানীসহ অন্তত ১০-১৫ জন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, চরে টাওয়ার থেকে পূর্বদিকে প্রায় কিলোমিটার জমি ছিল। কিন্তু মেঘনার ঢেউয়ে পূর্বদিকের প্রায় এক কিলোমিটার ও উত্তরদিকে প্রায় ৪০-৫০ ফুট চর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর দক্ষিণদিকেও চর ভেসে উঠেছিল। সেটিও বিলীন হয়ে গেছে।

এদিকে গত শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন উপজেলার মেঘনার চর পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিমুল হায়দার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী গৌর চন্দ্র পদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী উপস্থিত ছিলেন।

আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, মেঘনার উপর দিয়ে ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডের একটি লাইন গেছে। আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনার নদীর চরসোনারামপুর চরের পূর্বদিকে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জের জাতীয় এই বিদ্যুৎ লাইনের একটি টাওয়ার রয়েছে। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের ওই টাওয়ারটি পাওয়ার গ্রীড অব কোম্পানী স্থাপন করেছে। তাদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। তারা এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী গৌরপদ সূত্রধর বলেন, ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ওই জায়গায় বালু ভর্তি জিও বস্তা ফেলা হবে। এটা একটি ক্ষণস্থায়ী প্রক্রিয়া। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইতিমধ্যে ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, চরের খুব ভয়াবহ অবস্থা। যে কোনো মুহুর্তে ভাঙন চরের ওই বিদ্যুতের খুঁটিকে আঘাত করতে পারে। আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীদের এই ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close