হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

  ১৯ জুন, ২০১৯

রাইস মিলে ‘শুটার’ হচ্ছে সরকারি চাল

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় অনিয়মের মাধ্যমে মিল মালিকদের নিকট থেকে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও দালালের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুদামে নি¤œমানের চাল সংগ্রহ করছেন তারা। খাদ্য বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে মিল মালিকের অনৈতিক যোগসাজশে এই দুর্নীতি হচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া হতদরিদ্রদের ভিজিএফ, ভিজিডির চাল কালোবাজারির ফলে দুস্থরা চাল না পেলেও চলে যাচ্ছে উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের প্রভাবশালী চাতাল মালিক হাফিজের এম.এইচ অটোরাইস মিলে। সেই চাল রাইস মিল থেকে ছেঁটে-পরিষ্কার করে আবারো পৌঁছে যাচ্ছে শাহজাদপুর উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামে। এতে প্রকৃত কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার বিকালে অভিযুক্ত রাইস মিল এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে তার প্রমাণও পেয়েছেন উপজেলার সাংবাদিকরা। এ সময় মিল মালিকের বাধার মুখে পড়েন তারা।

সরজমিনে গত সোমবার বিকালে নরিনায় হাফিজের রাইস মিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মিলের পাশের রাস্তা দিয়ে ট্রলিতে ১৫০ বস্ত চাল রাইস মিলের ভিতরে সরাসরি ঢুকে পড়ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই বস্তাগুলো দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৩০ কেজি ওজনের চাল। উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিকরা গাড়ির চালককে চালের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এগুলো নরিনা ইউনিয়ন পরিষদের চাল, হাফিজ সাহেবের মালিকাধীন এম.এইচ. অটোরাইস মিলে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি।

এর কিছুক্ষণ পরেই চালের বস্তা ভর্তি আরে একটি ট্রলি সাংবাদিকদের নজরে আসে। এই গাড়ীর চালক মো. হাসান কথা প্রসঙ্গে জানান, এ চাল ভাঙ্গুড়ার হাট-উধুনিয়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছে হাফিজের রাইস মিলে সরবারহ করার জন্য।

এদিকে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার সময় মিল মালিক হফিজ সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘দুই কোটি টাকা দিয়ে শুটার মেশিন কিনে ব্যবসা করছি, আপনাদের (সাংবাদিক) এ চালের ব্যাপারে জানার কোন অধিকার নাই। আপনারা বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, এ চালের কারবার ওপর মহল ম্যানেজ করেই করি।’

এর আগে গত ১০ জুন বিকেলে সরকারি চাল চোরাচালান হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের একটি দল নরিনা ইউনিয়নের দূর্গাদহ বিশ্ব রোডের পাশে ট্রাক থেকে নছিমনে খালাসের সময় উপস্থিত হন। প্রশ্নের মুখে নসিমন চালক ও খালাশিরা বিভ্রান্তকর কথা বললে সন্দেহ হয় সাংবাদীদের। পরে বস্তাগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায় এগুলো প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চালের বস্তা। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজমুল হুসেইন খানকে মুঠোফোনে অবহিত করা হলে তিনি প্রতিনিধি পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে ফোন কেটে দেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রতিনিধি আসেননি। পরে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

গত সোমবার প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে ইউএনওকে বারবার ফোন করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিদিনের সংবাদ অফিস থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘দুস্থদের চাল দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা ফুড অফিসারের। তাকে এই ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ ১০ জুনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাকে জানান যে, ওটা বাইরে বিক্রি হওয়া মিলেরই চাল, এখন মানসম্মত না হওয়ায় ফেরত এসেছে। তবে ফোন পাওয়ার পর ফুড অফিসাকে আমি ঘটনা স্থালে পাঠিয়েছি।’ এদিকে গত সোমাবারের ঘটনায় তিনি বলেন, ‘খাদ্যগুদামের চাল মিলে শুটিং হয়ে গুদামে ফিরে আসার সুযোগ নেই।’ তার পরও তিনি খোঁজ নিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করবেন বলেন আশ্বস্ত করেন।

তবে ১০ জুন ঘটনাস্থলে খাদ্য কর্মকর্তা উপস্থিত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চত করেছেন সেদিন উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ। একইভাবে সেদিন ঘটনাস্থলেনা যাওয়ার কথা স্বীকার করেন উপজেলা এলএসডি গোডাউনের ওসিলিটি মো. ইয়াকুব আলী। তিনি জানান, সরকারি গোডাউন থেকে বের হয়ে যাওয়া চাল পুনরায় গোডাউনে নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। চাল মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করেই গোডাউনে মজুদ করা হয়। তবে আমরা নরিনা হাফিজের রাইস মিলের চালের প্রতি বিশেষ নজর রাখব।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফিরোজ মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close