সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

  ২৬ মে, ২০১৯

প্রাইমারি স্কুলের খাজনা দিতে সমস্যা, ফেরত যাচ্ছে টাকা

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বন বিভাগ ও সরকারি খাস জমিতে গড়ে উঠা ১০৬টি বিদ্যালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দিতে পারছে না উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ভূমি উন্নয়ন কর দিতে গিয়ে এ জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের জমির নামজারি (খারিজ) ও কর উপযোগী থাকায় ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৩ হাজার ২৪৮ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করেছে স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। বাকি ১০৬টি বিদ্যালয়ের জমির নামজারি না থাকায় ভূমি উন্নয়ন করের আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা ফেরত যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। মানবেন্দ্র দাস।

সখিপুর উপজেলায় ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার ৪১টি বিদ্যালয়ের জমির নামজারি রয়েছে। বাকি ১০৬টি বিদ্যালয় বনের অথবা সরকারি খাস জমিতে গড়ে উঠায় নামজারি করা যায়নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে স্থানীয় শিক্ষা কার্যালয় কাকড়াজান ইউনিয়নের ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহেড়াতৈল ইউপির ২টি, গজারিয়া ইউনিয়নের ৩টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের ৩টি, হাতীবান্ধা ইউপির ৯টি, যাদবপুর ইউনিয়নের ৪টি, বহুরিয়া ইউনিয়নের ২টি ও কালিয়া ইউনিয়নের ১০টি বিদ্যালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা হয়েছে।

ছাতিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম মিঞা বলেন, ১৯৮৯ সালে ছাতিয়াচালা গ্রামের মো. জালাল মিয়া ৫২ শতাংশ বনের জমি ছাতিয়াচালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে লিখে দিয়ে দাতা হন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের জমি নামজারি করার আমাদের নির্দেশনা দিলে বনের জমি থাকায় ওই বিদ্যালয়ের নামে নামজারি করা যায়নি। নামজারি না থাকায় আমাদের বিদ্যালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া যাচ্ছে না।

এ বিদ্যালয়ের জমিদাতা মো. জালাল মিয়া বলেন, ১৯৮৯ সালে ওই ৫২ শতাংশ জমি আমার দখলে ছিল। সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে দলিল মূলে দান করেছি। আমি ওই সময় জমি দান না করলে ওই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতো না। আর জমিগুলো এখন পর্যন্তও আমার ভোগ দখলেই থাকত।

একইভাবে প্রতিমা বংকী উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের এ জমি ১০০ বছর ধরে আমরা বংশ পরম্পরায় ভোগ দখল করে আছি। তবে আমাদের বিদ্যালয়ের জমি বনের নয় ব্যক্তিমালিকানা রেকর্ডভূক্ত সম্পত্তি। আগে এসব জমির খাজনা নিলেও কয়েক বছর ধরে খাজনা নিচ্ছে না। সম্প্রতি ভূমি নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। তিনি জানান, সখীপুরে এ রকম ৩৫ হাজার একর জমির খাজনা নিচ্ছে না সরকার। জমির খাজনা নেওয়ার দাবিতে সখীপুরে প্রায় ২০ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে।

জানতে চাইলে সখীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস বলেন, আমরা ১৪৭টি বিদ্যালয়ের খাজনা দিতে সব সময়ই প্রস্তুত আছি। ৮টি ইউনিয়নের ৪১টি বিদ্যালয়ের নামজারি থাকায় খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে, অন্যদিকে বাকি ১০৬টি বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে জটিলতা থাকায় খাজনা দেওয়া যাচ্ছে না। এ অর্থবছরে খাজনার প্রায় ৫০ হাজার টাকা মন্ত্রণালয়ে ফেরত যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়শা জান্নাত তাহেরা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, উপজেলার যেসব বিদ্যালয়ের জমিগুলো বনবিভাগের অথবা সরকারি খাস জমিতে গড়ে উঠেছে ওইসব বিদ্যালয়ের জমির ভূমি উন্নয়ন কর নেওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে উপজেলায় ৪১টি বিদ্যালয়ের জমিদাতারা তাঁদের ব্যক্তিমালিকানায় থাকা রেকর্ড সম্পত্তি ওই বিদ্যালয়ের নামে দান করেছেন। এরাই হলেন সঠিক জমিদাতা। অন্যদিকে যাঁরা বনের জমি কিংবা সরকারি খাসজমি দিয়ে বিদ্যালয়ের জমিদাতা হয়েছেন তাঁরা প্রকৃতপক্ষে জমিদাতা নন। সরকার বা বনের জমি দিয়ে জমিদাতা হওয়া যায় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close