হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

  ২৫ এপ্রিল, ২০১৯

সংযোগ সড়কের অভাবে অকেজো ২ ডজন সেতু

সংযোগ সড়কের অভাবে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় দুই ডজন সেতু ও কালভার্ট বছরের পর বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব সেতু নির্মাণে ব্যয় হওয়া কোটি টাকা এখন অপচয়ের খাতায়। এ ছাড়া অনেক সেতু, কালভার্ট একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সেতু থাকার পরও সাঁকোতেই পর হতে হয় স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলায় এমনও সেতু রয়েছে যার দুই দিকে রাস্তা নেই, আবার সেতুর মাত্র দশ গজ রাস্তার পর শুধু ফসলি জমি। এ ছাড়া এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে চারটি সেতু। অব্যবহৃত ও অপরিকল্পিত সেতুর ছড়াছড়ি থাকলেও অনেক এলাকায় বাঁশের সাঁকোই ভরসা। উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ডায়া ঘোনাপাড়া গ্রামে নির্মিত একটি সেতু থেকে মাত্র দুইশ গজ দূরে খালের উপর নির্মিত হয়েছে ৪০ ফুট দীর্ঘ আরেকটি কংক্রিটের সেতু। ডায়া মোহন মাস্টারের বাড়ির পাশে নির্মিত এই দুইপাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় গত ৩ বছর ধরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহজাদপুর উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ নির্মাণ করে এ সেতুটি। সেতুর ফল থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। অথচ এটি এখন এলাকাবাসির কোন কাজেই আসছে না।

ডায়া ঘোনাপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেক, ফখরুল ইসলাম, মনজেল হোসেন, সুজন মিয়া, রজিনা খাতুন, খাদিজা খাতুন, শাহনাজ বেগম বলেন, সেতু তৈরির ৩ বছরেও দুই পাশে কোন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। তাই মই ছাড়া সেতুটিতে ওঠা যায় না। পরিত্যাক্ত হিসেবে এলাকাবাসি এখন গোবরের ঘোষি, ভেজা কাপড়, লেপ-তোষক, চট-ছালা, জামাকাপড় শুকানোর কাজে ব্যবহার করেন। এ জন্য তারা সেতুটির উত্তর পাশে একটি কাঠের মই স্থাপন করে নিয়েছেন।

এদিকে উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের কাদাই হাটখোলার দক্ষিণ পাশে ১টি ও কাদাই পূর্ব পাড়ার ২টি সেতুতে কোন সংযোগ সড়ক নেই। একই অবস্থা বেলতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ২টির সেতুর। এছাড়া সড়াতুল, চক হরিপুর, চর বাতিয়া, শান্তিপুর, লোচনাপাড়া, বাচরা, হাট বায়রা, কাকিলামারি ও মাদলা কোল্ড স্টোর সংলগ্ন এলাকায় একটি করে সেতু রয়েছে যার সংযোগ সড়ক নেই। জালালপুর ইউনিয়নের সড়াতুল গ্রামে একটি, বিশ্বনাথপুর, উল্টাডাব ও গুধিবাড়ি গ্রামে অবস্থিত একটি করে সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় জনগণের কোন কাজেই আসছে না এসব সেতু। শাহজাদপুরে এ রকম প্রায় দুই ডজন সেতুর নিচ দিয়ে বর্ষায় নৌকায় ও শুষ্কমৌসুমে পথচারিদের চলাচল করতে হচ্ছে।

এদিকে সেতু অব্যবহৃত থাকা নিয়ে খোঁজ নিতে গেলে কোনো বিভাগই এর দায়িত্ব নিতে চায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে একটা ধারণা তৈরি হয়। তারা জানান, শাহজাদপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল, করতোয়া ও হুরাসাগর নদী যমুনায় মিশেছে। বর্ষায় এই নদীর পানিতে উপজেলা প্লাবিত হয়। এছাড়া চলন বিলের পানিও এই উপজেলায় প্রবেশ করে। এ থেকে রক্ষায় বিশেষ প্রকল্পে আওতায় অধিকাংশ সেতু নির্মাণ করেন উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আহম্মেদ রফিক বলেন, এলজিইডির অধীনে কোনো অপরিকল্পিত সেতু নেই। জালালপুর ইউনিয়নে কেবল একটি মাত্র সেতু আছে যার সংযোগ সড়ক এখনো নির্মাণ হয়নি।

এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিন্দার আলী বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের অধীনে যে দুটি সেতুর সংযোগ সড়ক ছিল না তা ঠিক করা হয়েছে। অন্য সব সংযোগ বিহীন সেতুগুলো কোন কোন অধিদপ্তরের অধীনে তা আমার জানা নেই। শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি মনে করি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দ্বায়িত্বহীনতার কারণেই এ সকল সেতুগুলোর সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুসেইন খান বলেন, যেসব সেতুর সংযোগ সড়ক নেই ও ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোর সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close