ওমর ফারুক নাঈম, মৌলভীবাজার; সফিউল্লাহ আনসারী, ভালুকা (ময়মনসিংহ) ও সাহারুল হক সাচ্চু, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২৩ এপ্রিল, ২০১৯

ধানের বাম্পার ফলন হলেও হতাশ কৃষক

মৌলভীবাজারে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ভালুকা ও উল্লাপাড়ায় নেক ব্লাস্ট

সবখানে ইরি-বোরো ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু দেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজারে কয়েকধফার প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাড়াই ঝাড়াই শেষে ধান গোলায় তুলতে পারবেন কি না এই ভয় তাদের।

এদিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার গোয়ারী গ্রামে ধলি বিলে বেশ কয়েকটি ক্ষেত সহ আশপাশের বোর ক্ষেতে ধান মরে সাদা হয়ে শিষ লটকে পরেছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় ধানের ছড়ার গোড়ায় পচনভাব দেখা গেছে। ধান জমিতে মরা ছড়া সাদা ও কালো রং ধারণ করছে। কৃষি বিভাগ বলছে এটি ব্লাষ্ট রোগ ও ছত্রাক জনিত কারণে এমন হচ্ছে।

তিনদিন আগে ১৮ শতক জমির ধান কেটে ফেলেছেন উপল্লাপাড়ার বাঙ্গালা ইউনিয়নের মধ্য মহেশপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ‘ধান তো আর হলো না। অন্তত খড় গরুকে খাওয়ানো যাবে।’

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, হঠাৎ করে আসা ঝড়ের কবলে পড়ে জেলার সদর ও রাজনগর উপজেলা জুড়ে অবস্থিত কাউয়াদীঘি হাওর ও পুকুরিয়া বিলের শত শত একর জমির পাঁকা বোর শিলার আঘাতে শীষ থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে আছে। সর্বশেষ গত রোববার রাতেও প্রবল ঝড় ও শীলা বৃষ্টি হয়েছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৫২ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে উফশী ও স্থানীয় জাতের ৩২১ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে ২৪৬৬ হেক্টর জমিতে। এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ১১৬ হেক্টর।

হাওর বিস্তৃর্ণ রাজনগর উপজেলার সুনামপুর গ্রাম, কেশরপাড়া, সুপ্রাকান্দি, সুরিখাল, উমরপুর গ্রামের অনেক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এছাড়া ফতেপুর ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওরের গোলাইয়া, ঘাগটি বিল, মাজরবান্দ বিলে প্রায় ২ হাজার কিয়ারের পাঁকা ধান শীষ থেকে ছিটকে পড়েছে। বিল পাড়ের বেড়কুড়ি, ফতেপুর, শাহাপুর, জাহিদপুর, আব্দুল্লাহপুর, মেদেনীমহলসহ আরো অনেক গ্রামের প্রায় ১ হাজার কৃষক এ মৌসুমের ২৮, ২৯ ও ১৪ জাতের ধান চাষ করেছেন। হাকালুকি হাওর পাড়ের ভূকশিমইল ইউনিয়নের মহিশঘরি গ্রাম, বেড়কুড়ি, গৌড়করন গ্রামে ক্ষতি হয়েছে বেশি।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, শনিবারের শিলাবৃষ্টিতে শুধু রাজনগর উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিনে আমাদের কর্মকতারা হাওর দেখতে গেছেন। কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। তারা আসলে পরে জানা যাবে।

এদিকে ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার গোয়ারী গ্রামে ধলি বিলে বেশ কয়েকটি ক্ষেত সহ আশপাশের বোর ক্ষেতগুলো প্রথমে পাতামরে যায় পরবর্তীতে চিটা হয়ে ধানের শিষ বের হতে থাকে সারা ক্ষেত জুরে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ জানান, চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে বোর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া জনিত কারনে কিছু কিছু এলাকায় ব্লাষ্ট দেখা দিলেও ধানের মরগ ও বালাই নিয়ন্ত্রনে আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ছিটাল গ্রাম, সাতেঙ্গা, পাড়াগাঁও, খীরু নদীর পাড়ের ভান্ডাব গ্রাম, রুপীর খাল সংলগ্ন পূর্বপাড়, রাজৈ, উড়াহাটি, পনাশাইল, বিরুনিয়া, মল্লিকবাড়ী ব্রিজের দুই পাশ, পানিভান্ডা ও হবিরবাড়ী এলাকায় অনেক কৃষকের জমিতে শীষ ও পাতা মরা রোগ দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার সবাই বোরোর মধ্যে ব্রীধান ২৮ জাতের আবাদ করেছেন।

কৃষকরা জানান, তারা নানা রকম ঔষধ ছিটিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। কিছু জমির ধানগাছ কেটে গরুর খাদ্য বানিয়েছেন। তবে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবেরা খাতুন জানান, মাঝেমধ্যে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার আঙ্গারু, শহরিয়ারপুর, ধরইল বিল, জগজীবনপুর, ভয়নগর, পুর্ব মহেশপুর, ভেংড়ী, প্রতাপ এলাকাসহ আরো কয়েকটি মাঠের ইরি বোরো ক্ষেত্রে নেক ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদেরকে তারা মাঠে পান না। এদিকে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি তারা মাঠেই থাকেন।

গোটা উপজেলার ৩০ হাজার ১৩০ হেক্টরে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ইরি বোরো ধান ফসলের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি- ৫৮। এছাড়া বিভিন্ন নামের হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। তবে মোট জমির পরিমান চার দশমিক আশি হেক্টর ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে বলে গত রোবরার স্থানীয় কৃষি বিভাগ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা মো. খিজির হোসেন প্রামাণিক জানান, খারাপ ও বিরুপ আবহাওয়া জনিত কারণে ব্লাষ্ট রোগের পাশাপাশি বিভিন্ন ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি সহ তার বিভাগের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তাগণ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বৃষ্টিপাত হলে আর ক্ষতি হবে না।

উল্লাপাড়া ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে এ বিষয়ে অবহিত হয়েছেন। এ ক্ষয়ক্ষতি রোধে কৃষি বিভাগ থেকে সরাসরি কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close