সাকিব আল মামুন, গোলাপগঞ্জ (সিলেট)

  ২৪ মার্চ, ২০১৯

শরীফগঞ্জ পশু হাসপাতালে চিকিৎসক নেই ৫ বছর

গবাদি পশু নিয়ে বিড়ম্বনায় গোলাপগঞ্জের হাওর অঞ্চলের নিম্ন আয়ের বাসিন্দারা

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের সরকারি পশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় অত্র অঞ্চলের গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। অপরদিকে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি অরক্ষিত থাকায় জরাজীর্ণ হয়ে বর্তমানে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, পশু হাসপাতালটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে উপজেলা প্রানিসম্পদ হাসপাতালের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করার পরও কোন সুরাহা হচ্ছে না। সুচিকিৎসার অভাবে হাওরাঞ্চলের কৃষকের শেষ সম্বল গবাদী পশু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই।

দীর্ঘ ৫ বৎসর পূর্বে এ প্রতিষ্টানের ডাক্তার অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে, তার স্থলাভিষিক্ত আর কোন ডাক্তার এখানে যোগদান করেননি। এজন্য স্থানীয়রা এখানে ডাক্তার দেওয়ার জন্য জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগযোগ করেও সুফল লাভে ব্যর্থ হন। তাছাড়া অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকার ফলে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানের ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। হাসপাতাল ভবনের দরজা জানালায় জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ায় এমনটি হয়েছে এমন মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।

বর্তমানে হাসপাতালটির চতুপার্শে¦ বন-জঙ্গলে ঘেরা। দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেনা এখানে একটি প্রানিসম্পদ হাসপাতাল ছিল। কার্যক্রম বন্দ থাকায় স্থানীয়রা হাসপাতালের মাঠে লাউ, ঝিঙ্গা, শিমসহ নানা সব্জি চাষ করছেন। দুর থেকে দেখলে মনে হবে, কালের স্বাক্ষী হয়ে কোনমতে ভবনটি দাড়িয়ে আছে। কবে সরকারী পশু হাসপাতালে ডাক্তার দেওয়া হবে আর চিকিৎসা সেবা পাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের গবাদী পশু এনিয়েও প্রশ্ন জাগছে কৃষকের মধ্যে।

শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আহসান হামজা বলেন, হাসপাতালটির রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সরকারী ওষুধপত্রসহ মূল্যবান জিনিস দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে লুঠ করে নিয়ে গেলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন মাথা ব্যথা নেই। তাছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে এখানে কোন ডাক্তার না থাকায় এ অঞ্চলের গো-বাদি পশুর চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

আরিফ আহমদ নামে স্থানীয় এক কৃষক জানান, উপজেলার প্রানিসম্পদ হাসপাতালটি শরীফগঞ্জ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কি.মি. দুরে হওয়ায় সেখানে গিয়ে পশুর চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ডাক্তার কল করেও পাওয়া যায়না। তার কারণ উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালও লোকবল সংকটে। ডাক্তার বলেন, এত দুরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া তার পক্ষে অসম্ভব।

শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, সরকারী এ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় হাওর বেষ্ঠিত এ জনপদের লোকজন অবহেলা-বঞ্চনার স্বীকার। আপনাদের লিখনিতে যদি প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়, তাহলে কয়েক হাজার লোক উপকৃত হবে। শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এম এ মুমিত হীরা বলেন, যোগাযোগ অনুন্নত এ এলাকার মানুষ উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে কুশিয়ারা নদী ও কুড়া নদী পাড়ি দিতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। সরকারের সদিচ্ছার ফলে সরকারী পশু হাসপাতালটি পুনরায় চালু হলে যেমন উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নবাসী উপকৃত হবে, তেমনি বাদেপাশা, বুধবারীবাজার ইউনিয়নসহ বিয়ানীবাজার উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন স্বল্পমূল্যে তাদের গো-বাদি পশুর চিকিৎসা সেবা নেয়া সহজ হবে।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল হক বলেন, লোকবল সংকটের কারণে সরকারী প্রতিষ্টান বন্ধ রয়েছে সত্য। তবে এটি চালুর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে লোকবল সংকটের কারণে একা এতবড় একটি উপজেলা সামাল দেয়া তার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close