গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

  ২৪ মার্চ, ২০১৯

লিচুর বাগানে মৌ বক্স

গুরুদাসপুরে পরাগায়নে উৎপাদন বৃদ্ধির আশা

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় ইরি-বোরো ধানের পরেই লিচুর আবাদে খ্যাতি রয়েছে। এখন লিচু বাগানের গাছে গাছে মুকুল ফুটেছে, ছড়াচ্ছে গন্ধ। লিচুর উৎপাদন বাড়াতে বাগানে বাগানে চাষিরা বসিয়েছেন এ মৌ-বক্স। সেখান থেকে দলে দলে মৌ-মাছির ঝাঁক বসছে লিচুর মুকুলে। এতে মৌ-খামারীরা মধু সংগ্রহ করে ও লিচু চাষিরা হবেন লিচুতে লাভবান।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, লিচুর মুকুলে মৌ-মাছি বসলে পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর ফলন বৃদ্ধি হয়। একই সঙ্গে লিচুর আকার-আকৃতিও বাড়ে। এতে লিচু চাষিরা আর্থিক ভাবে লাভবান হন বেশি। পাশপাশি মৌ-খমারীরাও বাণিজ্যিক ভাবে মধু সংগ্রহ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। গেল ১০ বছর ধরে এপন্থা অনুসরণ করে লাভবান হচ্ছেন লিচুর বাগান মালিক ও মৌ-খামারীরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলার নাজিরপুর, বিয়াঘাট, চাপিলা ইউনিয়নসহ উপজেলা জুড়ে বানিজ্যিক ভিত্তিতে মোজাফফর, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রিজাতের লিচুর আবাদ হয়ে থাকে। উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে ২০০টি বাগান রয়েছে। এসব বাগানে ৮৫ জন খামারী ৮ হাজার মৌ-বাক্স বসিয়েছেন। মাত্র তিন সপ্তাহে (মার্চের শুরু থেকে তৃতীয় সপ্তাহ) প্রতিটি মৌ-বাক্সে সাড়ে ৩ থেকে ৪ কেজি মধু হয়। এতে গড়ে ৩০ মেট্রিক টন মুধু আহরন হয়ে থাকে। মৌ-খামারী মিলন হোসেন, দিলীপ দাস, সুবল দাস ও আব্দুল করিম বলেন, বাগানে আমরা শতাধিক ব্রুড ও নিউক্লিয়াস নামের ছোট বড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছি। প্রতিটি বাক্সে একটি রানী মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য এপিচ মেইলিফ্রা জাতের কর্মী মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা মৌ মৌ গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে। পরে মুকুল হতে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির দল নিজ নিজ কলোনিতে মৌচাকে এনে জমা করে। তারা আরো জানান, সরিষার মধুর দাম বেশি থাকে। তবে লিচুর মধু বাড়তি উপার্জন হয়। এসব মধু ভারতের ডাবর এবং ঢাকার এপি কোম্পানীর কাছে বিক্রি হয়ে থাকে। স্থানীয় চাষি ছাড়াও সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও পাবনাসহ দেশের অনেক জেলা থেকেও মৌ চাষিরা আসনে মধু সংগ্রহে। ছোট বড় নানা আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৌ চাষ করে থাকেন তারা।

নাজিরপুর ইউনিয়নের পুরস্কার প্রাপ্ত লিচু চাষি মো. আব্দুস সালাম বক্স ও সাকাওয়াত হোসেন বলেন, ২০০৮ সাল থেকে নাজিরপুর ইউনিয়নে স্বল্প পরিসরে লিচুর আবাদ শুরু হয়েছিল। এখন উপজেলা জুড়েই বাণিজ্যিক ভাবে লিচুর আবাদ হচ্ছে। শুরুতে লিচুর উৎপাদন ভালো ছিল না। কিন্তু সাত বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে লিচু চাষে সফলতা পাচ্ছে চাষিরা। তবে কীটনাশকের চেয়ে মৌ-মাছির পরাগায়ন পদ্ধতি লিচুর উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close