শফিউল সোহাগ, গলাচিপা (পটুয়াখালী)

  ১২ মার্চ, ২০১৯

গলাচিপায় বনবিভাগের খাল

বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

পটুয়াখালীর উপকূলীয় গলাচিপার বনবিভাগের আওতাধীন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের বিভিন্ন খাল ও নদ-নদীতে কীটনাশক প্রয়োগ করে অবাধে চলছে নানা প্রজাতির মাছ শিকার। গত বছরের বিষ প্রয়োগকৃত খালের পানি পান করে প্রায় দুইশ মহিষের মৃত্যু ঘটে। বনবিভাগ মাঝেমধ্যে এসব মৎস্য দস্যুকে আটক করলেও আইনের ফাঁক দিয়ে তারা বেরিয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় এসব মৎস্য দস্যু বনবিভাগের সহায়তায় এ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের ফলে এক দিকে যেমন বনের গহীনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও পোনা ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে কীটনাশক প্রয়োগ করে শিকার করা মাছ খেয়ে জনসাধারণ আক্রান্ত হচ্ছে নানান জটিল রোগে। এ ছাড়া কীটনাশক প্রয়োগ করা পানি পান করে হরিণ, মহিষসহ বনের নানা বন্যপ্রাণীও বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি মারাও যাচ্ছে।

উপজেলার একাধিক সূত্র জানায়, গলাচিপার বনবিভাগের আওতাধীন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের বিভিন্ন খাল ও নদ-নদীতে মাছ ধরার নামে জেলে নামধারী দুর্বৃত্তরা বনের গহিনে প্রবেশ করে অবাধে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকারে মেতে উঠেছে। এসব জেলে অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের আশায় বনে প্রবেশের সময় তাদের নৌকায় লুকিয়ে ডায়াজিনন, রিপকর্ড, ফাইটার, মার্শাল ও ক্যারাটে জাতীয় কীটনাশক নিয়ে যায়। পরে জোয়ার হওয়ার কিছু আগে ওই কীটনাশক চিড়া, ভাত বা অন্য খাবারের সাথে নদী ও খালের পানির মধ্যে ছিটিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই এলাকায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিষের তীব্রতায় নিস্তেজ হয়ে পানিতে ভেসে ওঠে। পরে এসব মাছ লোকালয় বা বিভিন্ন বাজারে বেচার জন্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

গলাচিপা উপজেলা কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুশিল চন্দ্র বিশ^াস জানান, এসব কীটনাশক মূলত ধানসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ মারার কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি খুবই বিষাক্ত।

সূত্র জানায়, বনবিভাগের চরকাশেম রেঞ্জের গরুভাঙ্গার খাল, গাছভাড়ানীর খাল, খোকারবাপের খাল, চিতলিয়া খালসহ বনবিভাগের আওতাধীন একাধিক নদীতে দিনের পর দিন এ সর্বনাশা কর্মকান্ড চলে আসছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অসাধু মৎস্যজীবিদের অপতৎপরতা তুলনামূলক বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বনজীবী জানান, এসব এলাকার বনের সংশি¬ষ্ট ক্যা¤েপর অসাধু বনরক্ষীদের প্রতি গোনে (দুইসপ্তাহ) নির্দিষ্ট হারে টাকা উৎকোচ দিয়ে দুর্বৃত্তরা অবাধে তাদের এ সর্বনাশা অবৈধ কারবার চালাচ্ছে। তবে বন বিভাগের চরকাশেম এলাকার বিট কর্মকর্তা মো. শাহে-আলম জানান, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন।

স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানায়, জেলে নামধারী এসব মৎস্য দুর্বৃত্তদের গডফাদার হিসেবে রয়েছে স্থানীয় কিছু মৎস্য আড়তদার ও দাদনদাতা। এসব আড়তদার মূলত জেলেদের বিপুল টাকা দাদন দিয়ে এ সর্বনাশা কারবার চালাতে উৎসাহ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া এক শ্রেণির অসাধু কীটনাশক বিক্রেতার সাথে রয়েছে এ চক্রান্তের যোগসাজশ। এ দিকে কীটনাশক প্রয়োগ করে এভাবে মাছ নিধনের ফলে মৎস্যভান্ডারখ্যাত উপকূলীয় গলাচিপার জলাশয়গুলো দিন দিন মাছশূন্য হয়ে পড়ছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান, বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পানির মধ্যে থাকা সব মাছ ও পোনা নির্বিচারে মারা যাচ্ছে। ইকো সিস্টেমের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি। আবার এরই ফলে ব্যাহত হচ্ছে প্রজনন প্রক্রিয়া। এ ছাড়া বিষমিশ্রিত পানি খেয়ে ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন প্রাণী নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অপর দিকে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ ধরে বাজারে অবাধে বিক্রি হওয়ায় জনসাধারণ এক প্রকার না জেনেই এসব মাছ অহরহ কিনে অজান্তেই নিজেদেরকে জটিল রোগে আক্রান্ত করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close