ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা)

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

জলাবদ্ধতায় ক্ষতির মুখে কৃষক

পাথরঘাটায় খাল দখলের মহোৎসব

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার প্রধান প্রধান খালগুলো দখলের মহোৎসব চলছে। সরকারি খাল দখল ও ভরাট করে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করছেন প্রভাবশালীরা। আর এতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন অসংখ্য কৃষক। এদিকে দখল হওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের কোনো প্রচেষ্টা না থাকায় বাজার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে চাপাক্ষোভ বিরাজ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অবৈধ খাল দখলদারদের আইনের আওতায় আনা এবং দখল ও ভরাটকৃত খাল পুনরুদ্ধার করে কৃৃষকের ফসলি মাঠ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কয়েকটি খাল এরই মধ্যে মরে গেছে। কয়েকটি খাল অস্তিত্ব হারানোর অপেক্ষায় দিন গুনছে। সুন্দরবনের কোলঘেঁষা বরগুনার পাথরঘাটার বিভিন্ন ছোট ছোট খাল অবৈধভাবে দখল করে ভরাট করছে কিছু প্রভাবশালী ভূমিদস্যু।

পাথরঘাটা ভূমি কার্যালয়ের তথ্যে জানা যায়, উপজেলায় সবশেষে এসএ রেকর্ড অনুয়ায়ী সরকারি খাল-বিল ও জলাশয় রয়েছে ৩০৭টি। ২০১৭ সালে জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী সংখ্যা হিসাবে ৩০৭টি খাল থাকলেও বাস্তবতায় নেই। স্থানীয়রা জানান, খালগুলো দ্রুত উদ্ধার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা না হলে একদিন পাথরঘাটা উপজেলার কৃষি ও পরিবেশ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা কালমেঘা ইউনিয়নে কুপধন এলাকার কামারহাট বাজারসংলগ্ন কালীপুর মৌজার ১১ একর ৩৬ শতাংশ জমির ওপর শতবর্ষী সরকারি খালটির জমি দখল করে প্রভাবশালীরা রাতারাতি দোকান ঘর তুলে দখল করে নিয়েছেন। অনেকে বেড়িবাঁধ দিয়ে মাছ চাষও করছেন। কালমেঘা ও কাঁঠালতলী ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক এই খালের পানি ব্যবহার করছেন। এই এলাকার অসংখ্য পানের বরজ, রবি শস্যের কাজে ব্যবহার হয় এ খালের পানি। অন্যদিকে ১২নং ঘুটাবাছ মৌজার ৩৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৫২ ফুট প্রস্থের খালটি নকশায় থাকলেও বিলুপ্তির পথে। কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী ভূমিদস্যু দখল করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক কাজে অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। এছাড়াও উপজেলার চরদুয়ানী বাজার, কালীবাড়ি, কালীপুর কাঁঠালতলী, কালমেঘা, কাকচিড়া, পাথরঘাটা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ খাল ভরাট হয়ে গেছে। এসব এলাকার খাল দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। দখলদাররা অনেকে দখলের কথা স্বীকার করলেও আবার কেউ কেউ রেকর্ডীয় জমিতে ঘর তুলেছেন বলে দাবি করেন।

এদিকে উপকূলীয় এলাকা পাথরঘাটা উপজেলার জলাধারগুলোতে পানির ¯্রােত না থাকা, ভরাট হওয়া ও দখল করায় নাব্য সংকটে পড়েছে খালগুলো। খালের নাব্য সংকট ও ভরাট হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে কৃষিতে।

পৌরসভার বাসিন্দা সাংবাদিক খলিলুর রহমান শাহীন বলেন, পাথরঘাটার প্রধান প্রধান খালগুলো প্রভাবশালীদের হাতে দখল হওয়ায় এরই মধ্যে নাব্য সংকটে পড়েছে। খালগুলো দ্রুত উদ্ধার করা না হলে একদিন কৃষি ও পরিবেশ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংকল্প ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মির্জা এস আই খালেদ বলেন, পাথরঘাটা কৃষিনির্ভর এলাকা। এছাড়া প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ আলুর জোগান দিচ্ছে এখানকার চাষিরা। নাব্য সংকটের কারণে কেবল কৃষিতেই প্রভাব পড়বে না, পড়বে পরিবেশের ওপরও। এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, খাল দখলের বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা অবগত আছি। এ ব্যাপারে অচিরেই পরিদর্শন শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close