কে এম রুবেল, ফরিদপুর

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

দেশের ৫০ শতাংশ পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হয় ফরিদপুরে

কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুর জেলার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজের আবাদ। এবছরও বীজের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষিরা। তবে চাষিদের অভিযোগ, লাল তীর বীজ ও পেঁয়াজের কাছে মার খাচ্ছে দেশী জাতের পেঁয়াজ বীজ। ফলে দিন দিন কমছে পেঁয়াজ বীজের আবাদ। পেঁয়াজ বীজ চাষীরা বিএডিসির কর্মপরিকল্পনা ও বীজের সঠিক মূল্য দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ভাষানচর গ্রামে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে পর মাঠ কদম ফুলের মত পেঁয়াজের ফুল ফুটেছে। যতদুর দৃষ্টি যায় শুধু সাদা ফুলের সমারহ। আর এই ফুল থেকেই বের হবে কালো রঙ্গের দানা। যাকে কৃষকেরা বলে কালো সোনা। এই গ্রামে প্রায় দুইশতাধিক কৃষক পেঁয়াজ বীজের আবাদ করছে। অন্য ফসল থেকে পেঁয়াজ বীজের চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা বীজের আবাদ করে। গুণ ও মানের দিক দিয়ে এই ভাষানচরের বীজ উন্নত হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবারহ করা হয়ে থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পেঁয়াজ বীজের ভালো ফলন হবে বলে আশা চাষিদের। তবে চাষিরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ ও লাল তীর বীজ আমদানী নাকরার জোর দাবী জানিয়েছেন।

জেলা বিএডিসি’র চুক্তিবদ্ধ বীজ উৎপাদন কারী ও বিক্রেতা মো. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘বিগত বিশ বছর ধরে আমি ও ভাষানচর গ্রামের দুইশতাধিক চাষি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে আসছি। পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে আমরা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছি। এবছরও আমি ৭বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছি। আমাদের গ্রামের উৎপাদিত বীজ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পুরন করে থাকে। কিন্তু দুখের বিষয় গত ৩/৪ বছর ধরে লাল তীর পেঁয়াজ বীজ ও পেঁয়াজের কাছে আমরা ধরা খাচ্ছি। লাল তীর বীজের কারনে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের দেশীয় পেঁয়াজ বীজ ও পেঁয়াজ। এই ভাবে চলতে থাকলে একসময় আমরা আমাদের দেশীয় পেঁয়াজ বীজ হারিয়ে ফেলব।’ তিনি আরো বলেন, লাল তীর পেঁয়াজ উচ্চ ফলন শীল হলেও এর স্বধ ও গুনগত মান নেই বললেই চলে। এজন্য লাল তীর পেঁয়াজ বীজ ও পেঁয়াজ আমদানী না কারার দাবী জানান এই কৃষক।

স্থানিয় চাষিরা জানায়, জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, দিনমজুর, ফসল উত্তোলনসহ বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশে) খরচ হয় হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা থেকে বীজ পাওয়া যাবে দুই থেকে আড়াই মণ। বাজার ভাল থাকলে এক বিঘা জমির বীজ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে।

পেঁয়াজ বীজ চাষী মনিরুল ইসলাম ফরহাদ বলেন, আমাদের এলাকার পেঁয়াজ বীজের গুনগত মান অনেক ভাল। দেশের চাহিদার মোট বীজের প্রায় ৫০ শতাংশ আমাদের উৎপাদিত বীজ দিয়ে করে থাকি। তবে বর্তমানে আমরা পেঁয়াজ আবাদ করে লাভবান হতে পারছিনা। কারন দেশী পেঁয়াজের বীজের কদর কমেগেছে। লাল তীর বীজের ফলে দেশী জাতে বীজ হারিয়ে যাচ্ছে। আর দিন দিন কমছে আমাদের এলাকায় বীজের আবাদ। গতবছর আমি ৩বিঘা জমিতে বীজের আবাদ করেছিলাম। বীজের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় এবছর মাত্র এক বিঘা জমিতে বীজের আবাদ করেছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, চলতি বছর ১৮০০ হেক্টোর জমিতে বীজের আবাদ হয়েছে। যা গতবছরের চেয়ে দুইশ হেক্টোর কম আবাদ হয়েছে।

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, এ জেলায় মূলত তিন ধরনের পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থাকে। বারী-১, তাহেরপুরী ও লাল তীর কিং। তবে সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়ে থাকে তাহেরপুরী ও বারী-১। তবে কিছু চাষি লাল তীর কিং আবাদ করছে। লাল তীর আবাদ এর কারণ এর ফল অধিক হয়। সে কারনে কৃষক লাভবান হচ্ছে। তবে দেশী পেঁয়াজের যে ঝাঁজ ও স্বাধ আছে, লাল তীরে সেই ঝাঁজ ও স্বাদ নেই। আমাদের দেশের মানুষ ঝাঁজ ও স্বাধটাকে বেশী পছন্দ করে। লাল তীরের কাছে দেশী জাত কখনই হারিয়ে যাবেনা বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close