স্বকৃত গালিব, কুবি

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

কুবির শহীদ মিনার

অর্ধযুগেও অসম্পন্ন সারা বছরই অরক্ষিত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কাজ শুরু অর্ধযুগেও সম্পন্ন হয়নি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ। ঠিকাদারের হাত বদল, কর্তৃপক্ষে অবহেলা ও স্থানান্তরের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এদিকে বছরের বিশেষ কয়েকটি দিন ছাড়া সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। রাতে নিরাপত্তাকর্মীর অনুপস্থিতি ও আলোর ব্যবস্থা না থাকায় এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলে বসে মাদকের আসর। অথচ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে এখানেই শ্রদ্ধা নিবেদন করে সবাই।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ দিকে একটি টিলার উপরে দুটি স্তম্ভ এবং মূল বেদী নিয়ে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। অর্থ সংকট, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাবে শহীদ মিনারটি বর্তমান রূপে আসতে সময় লেগেছে প্রায় অর্ধযুগেরও বেশি সময়। নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই খসে পড়েছে শহীদ মিনারের মূল স্তম্ভে লাগানো টেরাকোটা এবং যতেœর অভাবে কালো শ্যাওলা জন্মেছে মূল দুটি স্তম্ভে। সৌন্দর্য বর্ধনে লাগানো গাছ পরিচর্যার অভাবে বিলিন হওয়ার পথে।

জানা যায়, ২০০৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা মাস্টার প্লান অনুযায়ী সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পাশে টিলার ওপর প্রস্তাবিত শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওই স্থানকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নান্দনিক নকশা তৈরি করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী অধ্যাপক ড. হাসেম খান। পরে শহিদ মিনারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমীর হোসেন খান ২০১১ সালে শহীদ মিনারের স্থান পরিবর্তন করেন বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের পাশের পাহাড়ে। কিছুদিন নির্মাণ কাজ চলার পর বন্ধ হয়ে পড়ে এর নির্মাণ কাজ।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি ফের শুরু করা হয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ। তখন নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৭০ লাখ টাকা। একই বছর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কাজ বন্ধ করে দেয় শহীদ মিনার নির্মাণে টেন্ডার পাওয়া আর কে ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পুরো এক বছর নির্মাণ স্থগিত থার পর ২০১৩ সালের কয়েক মাস চলে নির্মাণ কাজ। কিন্তু ২০১৪ সালের পুরোটা সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। এ সময়ে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যথাক্রমে ৪৫ লাখ ও ২০ লাখ টাকা কাজের টেন্ডার দেওয়া হয়। তাদের ২৪৫ কার্য দিবসের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়। দীর্ঘ কাঠখোড় পেরিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন, সংলগ্ন সড়ক নির্মাণ আলোক সজ্জাসহ নানা কাজ বাকি থাকায় এখনো পরিপূর্ণ রূপ পায়নি শহীদ মিনারটি।

সরেজমিনের দেখা যায়, শহীদ মিনারের মূল বেদীসহ আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাতে বার-বি-কিউ পার্টির পরিত্যক্ত কয়লা, সিগারেটের খোসা, চানাচুরের প্যাকেট, পানির খালি বোতল, টিস্যুপেপার, ছেঁড়া জুতা। মূল বেদীতে জুতা পায়েই চলে আড্ডা এবং ঘুরা ফেরা। বেহাল দশা ক্যাম্পাস থেকে এর রাস্তার।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. সাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমাদের লোকবল সংকট তাই শহীদ মিনারের নিরাপত্তার জন্য আলাদা লোক দিতে পারি না। তবে খুব দ্রুতই শহিদমিনারে আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’ এস্টেট শাখার পরিচালক সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সীমিত সংখ্যক লোকবল দিয়ে যতটুকু সম্ভব আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মাদক বেচাকেনা এবং সেবনের ঘটনা আমাদের কানে আসে। কিন্তু কে বা কারা করে, তার সঠিক তথ্য না জানায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্র্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘শহীদ মিনারে আলোক সজ্জার কাজ ২১শে ফেব্রুয়ারির আগেই করা হবে। মাদকের বিষয়ে সঠিক তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিব। আর নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নিব।’ তবে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত শহীদ মিনার এলাকা ৪টি সোডিয়াম লাইট ও মরিচা বাতির আলোকসজ্জা ছাড়া কিছু দেখা যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close