মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

কুসিকে ড্রেন নির্মাণে অনিয়ম সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী

দেশের অন্যতম প্রাচীন শহর কুমিল্লাকে সিটি করপোরেশনের উন্নীত করেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। নগর উন্নয়নে নেওয়া নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পর জলাবদ্ধতা আর যানজট লেগে থাকছে। এখনো সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। দুই বছরে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা (জাইকার) অর্থায়নে নগরীর সর্বত্র ড্রেন নির্মাণ করা হলেও সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। তাই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে কোনো কাজে আসছে না তাদের।

বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, দেশের অন্যতম প্রাচীন কুমিল্লা শহর এক সময় ব্যাংক, ট্যাঙ্কের নগরী নামে পরিচিত ছিল। ২০১১ সালের মাঝামাঝি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনের মর্যাদা দেয়। ২৭টি ওয়ার্ডবিশিষ্ট এই মেগাসিটির আওতায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) কার্যক্রম প্রায় ৫৩.৪ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। বিগত মেয়র নির্বাচনের সব প্রার্থী ইশতেহারে ড্রেনেজ সমস্যা সমাধান ও যানজট দূরীকরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড ছাড়াও নগরীর আশপাশ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে জাইকার অর্থায়নে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বছর ধরে ড্রেন নির্মাণ করছে কুসিক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি অভাবে অনেকটা দায়সারাভাবে ড্রেন নির্মাণ চলছে ঠিকাদার। অনিয়মের দৃশ্যও খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়।

কোথাও দুই বছর আগে ড্রেনের কিছু অংশ নির্মাণ করা হলেও বাকি অংশ নির্মাণ না করায় পানি নিষ্কাশনে কোনো কাজে আসছে না। অনেক স্থানে ড্রেন নির্মাণের পর ময়লা আবর্জনায় ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে পড়েছে। স্ল্যাব ভেঙে ড্রেনের ওপর পড়ে থাকায় পানি প্রবাহ হচ্ছে না কথাও। এসব ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ আছে।

এছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় ড্রেনের মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই শেষ করা হয়েছে নির্মাণ কাজ। বক্স ড্রেনগুলোর নানা স্থানে স্ল্যাব ভেঙে পড়ায় ময়লা-আবর্জনা জমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ। নগরীর কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ড্রেনগুলোতে প্রবেশের মুখ বন্ধ থাকায় সড়কের বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হতে পারে না। নগরীর প্রাণ কেন্দ্র কান্দিরপাড়ে আধাঘণ্টার বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

নগরীর শাসনগাছা এলাকা একাধিক বাসিন্দা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ড্রেন নির্মাণে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে দেখভাল না করায় অনেক স্থানে কাজের মান নি¤œ হয়েছে। নির্মাণের অল্প সময়ের ভেতর এই অবস্থা, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে কুসিকে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, নগরীর সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিক হলেও সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা ও ঠিকাদারদের নিম্নমানের কাজের কারণেই কাক্সিক্ষত সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। ফলে জাইকার অর্থায়নে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজের সুফলের পরিবর্তে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শাসনগাছা, রেসকোর্স, ঠাকুরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেনের কাজ অসমাপ্ত রাখায় বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানিও স্বাভাবিক নিষ্কাশন হচ্ছে না। এছাড়া রেসকোর্স, তালপুকুরপাড়, বাগিচাগাঁও, শাসনগাছা, লাকসাম রোড এলাকায় ড্রেনের মাঝখানে বৈদ্যুতিক পিলার রয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার চৌরাস্তা, আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল এলাকাসহ অনেক স্থানে ড্রেনেজের কাজ এখনো অসমাপ্ত পড়ে আছে। এছাড়াও শাসনগাছা রেলগেট থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল হয়ে পশ্চিম দিকে দুই পাশে ড্রেনগুলোও বিভিন œস্থানে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। একইভাবে শাসনগাছা রেলগেট থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের দুই পাশে ড্রেনগুলোর বিভিন্ন স্থানে এখন শেষ করা হয়নি। নগরীর পার্শ্ববর্তী শাসনগাছা বিদ্যুৎ অফিসে প্রবেশ পথের ড্রেনের দুই পাশে ময়লা-আবর্জনাসহ পূর্বদিকের অংশটি পিচ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।

ড্রেনগুলোর এই বেহাল অবস্থা জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল্লাহ বলেন, কিছু কিছু জায়গায় ড্রেন অসমাপ্ত রয়েছে। দ্রুত সেগুলো সম্পন্ন করা হবে। এছাড়াও অনিয়মগুলোর বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close