খাদেমুল ইসলাম, মাদারগঞ্জ (জামালপুর)

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

মাদারগঞ্জের একমাত্র নদী

ঝাড়কাটা এখন মাঠ

* ৩ কিলোমিটার নদীতে চলত পালতোলা নৌকা * পেশা হারিয়েছে তীবরর্তী হাজারো মানুষ * নেই মাছ ও পাখির প্রাচুর্য * দীর্ঘদিনেও হয়নি ড্রেজিং ও দখল উচ্ছেদ

কোথাও চলছে ফসল চাষ, কোথাও গোচারণ ভূমি, কোথাও শিশুদের খেলাধুলা, নয়তো বালু উত্তোলন; আবার কোথাও পরিণত হয়েছে দিঘিতে। এ অবস্থা জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা নদী ঝাড়াকাটার। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করায় বালু ও পলি জমে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এখন অবৈধ দখল ও স্থাপনা আর দূষণে বিপর্যস্ত উপজেলার একমাত্র খরস্রোতা নদীটি।

মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ, কড়ইচড়া ও গুনারীতলা ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে ঝাড়াকাটা। ১৯৪৫ সালে নদীটি উৎপত্তি। সময়ে ইসলামপুর উপজেলার হারগিলা নামক স্থানে যমুনার ধার তীব্র ¯্রােতে ভাঙনের ফলে মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর হয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও সড়িষাবাড়ি উপজেলা উপর দিয়ে যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয় ঝাড়াকাটা।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে এক সময় ছোট-বড় নৌকায় করে ধান, পাটসহ নানা পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হত। তাছাড়া নদীটি ছিল দেশী মাছে ভরপুর। নদী তীরবর্তী মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সে সময় মাদারগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নগুলোর ভাল সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে নৌকাই ছিল একমাত্র বাহন। এই নদী দিয়ে জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত।

এখন সড়ক পথের উন্নিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণ হয়েছে। ফলে নদীর স¦াভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বালু ও পলি জমের নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিনেও ড্রেজিং না করায় ¯্রােতস্মিনী নদীটি এখন পরিত্যাক্ত ও দখলের মাঠে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, মাদারগঞ্জ উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ঝাড়কাটা নদীর কোন স্থানে বালু ও পলি মাটিজমে জেগেছে চর আবার কোথাও পরিণত হয়েছে দিঘিতে। পানি সংকটে নদীতে মাছ না থাকায় দুই তীরের বসবাসকারী জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। মাঝিরাও জীবিকার প্রয়োজনে ছেড়ে দিয়েছে বাপ-দাদার পেশা। পানি প্রবাহ না থাকায় তীরবর্তী মানুষেরা নদীর বুকে ফসল চাষ করছেন।

নদীর ওপর ভাগে ধানের বীজতলা ও নদীর তলায় ধান রূপন করার দৃশ্য চোখে পড়ে। কোথাও মাসকালাই, মরিচ, গম খেসারিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে। দেখে মনে হয় নদীর কোন অস্তিÍত্ব নেই। মাঝে মাঝে দেখা যায়, ছোট ছোট দিঘী। সেই নদীতে মাছ শিকার ও গবাদি পশু গোসলের দৃশ্যও চোখে পড়ে। ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।

স্থানীয়রা জানান, নদীর ওপর বেশ কিছু সেতু হওয়ায় নব্য হারিয়ে এখন এটি মৃত প্রায়। জেগে উঠা চরগুলো দখল করে চাষাবাদ করছে পাশের জমির লোকজনরা। নদীটি উদ্ধারে কোন উদ্দোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। বর্তমানে নদীটি দেখে মনে হয় না যে, এক সময় এই নদীতে ¯্রােত ছিল। নদীটি দখল মুক্ত ও খনন করে উপযোগিকরতে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসি।

কড়ইচড়া ইউনিয়নের জটিয়ার পাড়া গ্রামের তোতা মিয়া জানান, এক সময় নদীতে প্রবল ¯্রােত ছিল, সেসময় নদীতে চলাচল করত পালতোলা বড় বড় নৌকা। বড় দু’তলা পাল তোলা নৌকায় ধান পাট গম নিয়ে যেত। গাংচিল, মাছরাঙা বক সহ বিভিন্ন প্রজাতি পাখির কলকাকলিতে মূখরিত থাকত নদী এলাকা। আর নদী থেকে প্রচুর পরিমাণে দেশি মাছ ধরা যেতো। আজ সেই পাখির বিচরণ, সেই মাছ ধরার দৃশ্য এখন চোখে পড়ে না। নদীতে বালুর স্তর পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এখন শুকনো মৌসুমের আগেই নদীর পানি শুকিয়ে যায়। ফলে হারিয়ে গেছে মাছের সেই সোনালি দিন।

গুনারীতলা ইউনিয়নের বৃদ্ধ সুরুজ মিয়া, তজিম, মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, কয়েক যুগ আগেও নদীটি জীবন্ত ছিল। আমরা নৌকা যুগে বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসা করতাম। তখন তেমন রাস্তাঘাট ছিলনা। এই নদীতে বোয়াল, আইড়, কাতল, চিতল, সোল, গজারসহ বিভিন্ন জাতের প্রচুর মাছ ছিল। এখন সেই মাছগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। এখন বর্ষাকালে ঝাড়কাটা নদীতে পানির যৎসামান্য প্রবাহ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে একেবারে ধু ধু বালু চরে পরিণত হয়। নদীটি মরে যাচ্ছে। নদীটি বাঁচাতে কারও কোন তৎপরতা নেই।

জানতে চাইলে জেলা পাউবো নির্বাহি প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী জানান, ঝাড়কাটা নদী প্রসস্ত ও গভীরতা কমে প্রায় সমতল হয়েছে। নদীতে ড্রেজিং করার প্রস্থাব উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খননরে কার্যক্রম গ্রহন করলে নদীর নব্য বৃদ্ধি পাবে। তবে কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শুরু হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি এই কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close