গাজী শাহাদত ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ফের রেশম উৎপাদনে বিস্তীর্ণ হচ্ছে তুত চাষ

রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুনরায় রেশম কারখানা চালুর উদ্যোগ

রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁয়ে বন্ধ রেশম কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়ার পর কর্মচাঞ্চল্য এসেছে সিরাজগঞ্জের ৮ সাবসেন্টারে। এই সেন্টারের অধীন বিভিন্ন উপজেলায় ফিরছে তুত আবাদ। রেশমগুটি উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হাজারো মানুষ নতুন করে তাদের কর্মসংস্থান শুরু করেছে। যমুনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও অসচ্ছল পরিবারগুলো রেশ কারখানা চালুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কর্মসংস্থানে ফিরে এসেছে। চলতি অর্থবছরের রেশমগুটির উৎপাদন গত অর্থবছরের চেয়ে ছাড়িয়ে গেছে।

রেশম উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্তরা বলছেন, ২০০২ সালে দেশের প্রধান দুটি রেশম কারখানা বন্ধ করে তৎকালীন বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান ট্যাক্স ছাড়া বিদেশ থেকে নিম্নমানের রেশম সুতা দেশে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়।

সিরাজগঞ্জ রেশম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রেশম চাষের জন্য জেলার ৮টি সাবসেন্টার রয়েছে। এগুলো হলো সদর থানার বাগবাটি, খোকশাবাড়ী, ভাটপিয়ারী, ছোনগাছা, কাজিপুর উপজেলায় চালিতাডাঙ্গা ও শিমুল দাইড় এলাকায়। এছাড়াও উল্লাপাড়া, তাড়াশ ও রায়গঞ্জে রেশম উৎপাদন হয়। সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলছে এখানে।

তুত চাষিরা জানান, তুত চারা গাছ প্রদান করে সরকার আমাদের পরিত্যক্ত জায়গায়, বাঁধে গাছ লাগিয়ে তুত পাতা রেশম বা পোলোপোকাকে খাওয়ানো হয়। এই পোকাগুলোকে ঘরে পালন করতে হয়। প্রতিদিন ৩-৪ বার খাবার দিতে হয়। এই এলাকার আবহাওয়া অনুকুলের জন্য উৎপাদন ভালো।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে রেশম কারখানাটি স্থাপন করে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস। ১৯৯৫ সালে রেশম কারখানাটি আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে। আধুনিকীকরণে মোট ব্যয় হয় এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা। লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বরে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় রেশম কারখানা। রেশমের উন্নয়নে রাজশাহীতেই স্থাপন করা হয়, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়। কিন্তু ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় রেখে ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানার প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক। এই কারখানার অধীনে সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু সাব- সাব-সেন্টার স্থাপন করা হয়।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ভয়াবহ বন্যায় নদী ভাঙ্গনের শিকার সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় জায়গার অভাব থাকলেও অস্থায়ী বাঁধের আশেপাশে তুত চাষ ও পালু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন স্থানীয়রা। গত মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ব্যাপক রেশম উৎপাদন হয়। বছরে ভাদুরী, অগ্রাহনী, চৈতা, ও জৈষ্ঠা পোলনের জন্য আবহাওয়া অনুকুলে থাকে।

রেশন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২৩.৩০০ হাজার ডিম পালন করে ৩ হাজার ১৬৫ কেজি রেশম গুটি উৎপাদন করা হয়। চলতি অর্থ বছরে ইতি মধ্যেই ২য় পর্যায়ে এই উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৮৭৬ কেজি উৎপাদন হয়েছে। যার অনুমানিক মূল্য ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মাত্র। উল্লেখ্য গত বছর সার্কের টিম সিরাজগঞ্জে রেশম চাষ পরিদর্শনে এসে সন্তষ্টি প্রকাশ করেন।

রেশম চাষী আয়শা বেগম, আব্দুল খালেক, মমতা বেওয়া প্রতিদিনের সংবাদকে জানায়, তাদের বাড়িঘর যমুনায় ভেঙ্গে গেছে। বাঁধের ধারে গাছলাগিয়ে তারা দীর্ঘ দিন ধরে এই রেশম চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

তারা আরো জানায়, খালেদা জিয়ার শাসনামলে বিদেশীদের সঙ্গে চুক্তি করে রেশম আমদানি করায় চাষীরা ন্যায্য মূল্য বঞ্চিত হয়ে নিজেদের উৎপাদিত রেশম গুটি পালা দিয়ে অগ্নি সংযোগ করে। কিন্তু বর্তমান সরকার আমলে আমরা যেন ন্যায্য মূল্য পাই, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার রেশমের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে চাষিরা উৎসাহিত হয়ে ব্যাপক ভাবে এই চাষ শুরু করেছে। তাছাড়াও চাষিদের নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এলাকার ৪৫ চাষীকে ১টি করে পলু ঘর, সরঞ্জামাদি সহায়তা বাবদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। আরো ৩০ জন এই সহায়তা পাবেন। আশাকরা যায় এই এলাকায় রেশম চাষের উন্নয়নে বিরাট উন্নতি হবে।

জানা যায়, নদীভাঙনকৃত সিরাজগঞ্জের উল্লেখিত এলাকায় আবাস ভূমি তথা বসবাসের ঘরের ও অভাব রয়েছে। একই ঘরে পোকা চাষ করে নিজেদেরও বসবাস করতে হয়। সরকার প্রধানের কাছে তাদের পৃথক রেশম চাষের ঘরের আবেদন জানিয়েছে এলাকাবাসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close