শাহাদাত হোসাইন, ফেনী

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

প্রভাবশালীদের দখলে বড় ফেনী নদী

ফেনীর সোনাগাজীর মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার বিশাল চর দখলের পর এবার বড় ফেনী নদী দখলে মেতে উঠেছে প্রভাবশালীরা। জেলা সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার একটি অংশ দিয়ে বয়ে চলা ওই নদীর তীর দখলে নেমেছে দুই উপজেলার প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র বিভিন্ন কৌশলে নদী দখল করছে। তারা ইতোমধ্যে মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার উজানে বড় ফেনী নদীর বিশাল অংশে মাছের খামার দিয়ে দখল করেছে।

সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১৯৮৬ সালে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধে মুহুরী সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। পরে প্রকল্পের উজানে প্রায় ১২ কিলোমিটার চর জেগে ওঠে। ১৯৮৭ সালের পর ওই চরের কিছু অংশ ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে লিজ নেয় এবং সিংহভাগ দখল করে প্রভাবশালীরা মাছ চাষের প্রকল্প গড়ে তোলে। তবে চর দখল নিয়ে সোনাগাজী ও মীরসরাই উপজেলার মানুষের মধ্যে বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মুহুরী বাঁধের উজানের পশ্চিম পাশে ১০ একর চরজুড়ে মাছের খামার গড়ে তুলেন কামরান হোসেনসহ কয়েকজন। এটি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব। তাদের দাবি, জমিটি তারা ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে ১৫ বছর আগে লিজ নিয়েছেন।

এছাড়াও নিজাম উদ্দিন, সেলিম চৌধুরী, হুমায়ুন কবির, আবু তৈয়ব আজাদসহ অন্তত ৫০ ব্যক্তি কয়েকশ একর ভূমি দখল করে মাছ চাষ করছেন। তাদেরও দাবি, তারা ফেনী পাউবো থেকে চর লিজ নিয়েছেন। এদিকে বাঁধের পূর্ব অংশের চর দখল করে মৎস্য খামার গড়ে তুলেছেন মাইনুল হোসেন, মোস্তফা সওদাগর, জাহাঙ্গীর সওদাগর, কামাল উদ্দিন, বদি সওদাগর, ফারুক সওদাগরসহ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি। একই দাবি তাদেরও।

তবে লিজ নেওয়া সরকারি ভূমিতে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি ও খনন করে পুকুর বা দীঘি তৈরিতে বিধিনিষেধ থাকলেও সেখানে ইট দিয়ে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ এবং বড় বড় পুকুর খনন করা হয়েছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটাও।

সরজেমিনে দেখা গেছে, সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ সড়কের মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার উজানের সংযোগস্থলের উভয়পাশে একাধিক ভূমিদস্যু চক্র বড় ফেনী নদীর তীরে বাঁধ দিয়ে অন্তত ৫০০ একর নদী দখল করে পুকুর কেটে মৎস্য চাষ করছে। দখলের কারণে বড় ফেনী নদী সংকুচিত হয়ে উজান থেকে পানির প্রবাহ বিঘিœত হচ্ছে। ফলে পানির চাপ বেড়ে মুহুরী বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় নূর আলম মিন্টু বলেন, প্রভাবশালীরা নদীর দুই পাশ দখল করে মাছ চাষ করছে। এভাবে দখল হলে বড় ফেনী নদী একসময় নালায় পরিণত হবে।

মুহুরী বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী নুরুল আফছার বলেন, নদী দখল রোধ করতে কয়েক বছর আগে অভিযান চালালে হামলায় পুলিশসহ ১০ জন আহত হন। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়েও অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

ফেনী পাউবো উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নূরনবী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিছু ভূমি সরকারি নিয়মনীতি মেনে লিজ দেওয়া হলেও সিংহভাগ ভূমি প্রভাবশালীচক্র দখল করে মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। আমরা পুলিশ নিয়ে অনেকবার অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আমাদের অফিস থেকে মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নদী দখলকারীরা যত প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দখলমুক্ত করা হবে।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘তিনি সোনাগাজীর ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলবেন। তা হাতে পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে সোনাগাজী ইউএনও মোহাম্মদ সোহেল পারভেজ বলেন, নদী দখলের বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না, এখন জেনেছি। নদী উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close