রাজু খান, ঝালকাঠি
চিকিৎসকদের কাছে জিম্মি ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল
* ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত থাকেন অনেক চিকিৎসক * ইসিজি মেশিন নষ্ট ও আল্ট্রাসনোগ্রাম বন্ধ ২ বছর ধরে * ৩০ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত ১২ জন
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালটি কয়েকজন চিকিৎসকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সিভিল সার্জন এ বিষয়ে প্রশাসনিক বা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। চিকিৎসকরা নিয়মিত অফিসে না এসেও বেতন নিচ্ছেন। বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। এ মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে দাবি করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। চিকিৎসকের অভাবে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ইসিজি মেশিনও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে দূর থেকে আসা রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর এ হাসপাতালে জেলার চার উপজেলার মানুষের চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল। কিন্তু এখানে এসে প্রতিনিয়ত তাদের হয়রানি হতে হচ্ছে। সরকারি সব সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান থাকলেও তা উপকারে আসছে না অনেক ক্ষেত্রেই। হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩০টি। কিন্তু কর্মরত আছে ১২ জন। এদের মধ্যে শুধু আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম ফরহাদ, গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. মৃণাল কান্তি, ডেন্টাল সার্জন ডা. তোফাজ্জেল হোসেন ও ইউনানি ভেষজ চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম কর্মস্থল ঝালকাঠিতে থাকেন। এছারা অপর আটজন চিকিৎসক থাকেন বরিশালে। কর্মস্থলে থাকা বাধ্যতামূলক সরকারের এ কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তারা মানছেন না। ফলে রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অজ্ঞান চিকিৎসক কানিজ ফাতিমা ঝালকাঠিতে সার্বক্ষণিক থাকলে সরকারি খরচে দিন-রাত হাসপাতালে সিজার করা সম্ভব হতো। কিন্তু তিনি বরিশালে থাকায় বাহিরে অনেক টাকার বিনিময়ে সিজার করাতে হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
গতকাল সোমবার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শুধুমাত্র আবাসিক চিকিৎসক, ১০৭ নম্বর কক্ষে এবং জরুরি বিভাগে মোট দুই চিকিৎসকসহ তিনজন কর্মরত ছিলেন। এখানে কর্মরত বাকি ৯ জন চিকিৎসকই ছুটি ছাড়াই সেদিন অনুপস্থিত। যদিও অজ্ঞান চিকিৎসক কানিজ ফাতিমা ছিলেন সেদিন ছুটিতে। এভাবে প্রায় দিনই সদর হাসপাতালের দিনগুলো যাচ্ছে চিকিৎসক ছাড়াই। বায়োমেট্রিক মেশিনটি চালু থাকলেও তা বাধ্যতামূলক না হওয়ায় এভাবেই অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছেন এসব চিকিৎসক। কোন কারণ ছাড়াই ছুটিতে থাকছেন তারা। যদিও সিভিল সার্জন এসব চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে না পারলেও মাঝে মধ্যে তাদের শোকজ করেন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রামের একাধিক মেশিন থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এসব যন্ত্র। ফলে বাহির থেকে রোগীদের দুই থেকে তিন গুণ বেশি চার্জ দিয়ে আলট্র্রাসনোগ্রাম করিয়ে রিপোর্ট আনতে হচ্ছে। ১০ দিন ধরে ইসিজি মেশিনও বিকল হয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞ কেউ না থাকায় নার্স দিয়ে ইসিজির কার্যক্রম চালানো হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও গোলাম ফরহাদ জানান, মেশিনটি অচল হওয়ার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হালদার বলেন, আসলে এখন কম সংখ্যক চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন। বায়োমেট্রিক মেশিনটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে নাইট ডিউটি থাকার কারণে হয়ত দুই-একজন ডে শিফটে অনুপস্থিত এবং ছুটিতে থাকা ছাড়া ছুটি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আমার নজরে আসেনি।
"