ইকবাল হোসেন রুবেল, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম)
চ্যানেলে বালু উত্তোলন পরিবেশ বিপর্যয়ে উপকূল
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে সমুদ্রে ড্রেজার বসিয়ে তীরবর্তী এলাকা হতে বালি উত্তোলন করছে একটি স্বার্থন্বষী মহল। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে ফলে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জনবসতি। দীর্ঘদিন ধরে উপকূলবর্তী এলাকায় বালি উত্তালনের এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এমনকি গত দুই বছরে সমুদ্রের বুকে মিশে গেছে তীরবর্তী পানি রক্ষা বাঁধের পশ্চিম পার্শ্বে জেগে উঠা শত বছর আগের চর। দিনে-দুপুরে এই বালি উত্তোলন অব্যাহত থাকলেও কিছুই জানে না বলে দাবি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
মুরাদপুর ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলে নৌকায় ড্রেজার বাসিয়ে বলি উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আতাঁত করে চলছে এই ব্যবসা। এতে চ্যানেলের তীরবর্তী অংশ ভেঙে বসত বাড়ি ও কৃষি জমি সমূদ্রগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
গুলিয়াখালী গ্রামের একাধিক বাসিন্দা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে মুরাদপুরের গুলিয়াখালী এলাকা হতে দিনে-দুপুরে সমুদ্র হতে বালি তুলে অন্যত্র নিচ্ছেন কতিপয় লোকজন। সমুদ্র তলদেশ থেকে বালি উত্তোলন ফলে যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে নদীর তীরবর্তী অংশ। এর সঙ্গে উপকূলীয় অংশ ভেঙে পড়লে সমুদ্র উপকূলী বনাঞ্চলের পাশাপাশী ক্ষতির সম্মূক্ষীণ হবে বসত-বাড়িসহ কৃষি জমি।’ অন্যদিকে প্রকৃতিক সৌন্দর্যে সাজিয়ে উঠায় ভ্রমণ পিপাসুদের বিনোদন স্থানে পরিণত হয়ে উঠেছে গুলিয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল। আর সে স্থানকে ঘিরে উত্তোলিত হচ্ছে বালি। এ পরিস্থিতিতে বিনোদন স্থানে ঘুরতে এসে আতংকিত হয়ে পড়ছে ভ্রমনপ্রেমীরা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলেন, ‘গুলিয়াখালীর মতই বিনোদনের স্থান ছিল বাঁশবাড়িয়া উপকূলীয় এলাকা। কিন্তু একটি স্বার্থন্বেষী মহল সমুদ্র থেকে বালি তুলে ধ্বংস করছে সৌন্দর্য বর্ধক স্থানটি। এখন একই কায়দায় সমুদ্রগর্ভ থেকে বালি তুলে গুলিয়াখালীকেও বানানো হচ্ছে মৃত্যুকূপ। অতিদ্রুত এটা প্রতিরোধ করা না হলে বাঁশবাড়িয়ার অংশও ধ্বংস হয়ে যাবে।
উপকূলীয় বনকর্মকর্তারা বলেন, বালি উত্তোলনের কারণে উপকূলীয় বনভূমি এখন ধংসের মুখে। সেই সঙ্গে গুলিয়াখালীর বিনোদন পার্কের বরাদ্ধটি বাতিল হয়ে যাবে। সীতাকুন্ড উপকূলীয় বনকর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য বাড়াতে গুলিয়াখালীকে ঘিরে ইকোপার্ক তৈরির উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে শুরু হবে ইকোপার্ক তৈরির কাজ। এ অবস্থায় নদী গর্ভ হতে যে হারে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে পরিবেশ ধ্বংস হয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে উপকূলীয় বন ও ইকোপার্ক। অথচ আইনের তোয়াক্কা না করে বালি উত্তোলন হলেও প্রভাবশীদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না সাধারন মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা।
জানতে চাইলে মুরাদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী বাবু বলেন, ‘পরিবেশ ধ্বংস করে সমুদ্র গর্ভ থেকে কারা বালি তুলছে তা জানা নেই। তবে প্রভাবশালী ছাড়া আইনকে অমান্য করে বালি তুলার সাহস কারো নেই।’ এরপরও প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সমুদ্র থেকে বালি উত্তোলন শুরু থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছে স্থানীয় লোকজনসহ বীচ সংরক্ষণ পরিচালনা কমিটি। গুলিয়াখালী বীচ সংরক্ষণ পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে সমূদ্র উপকূলে ভীড় জমে উঠেছে পর্যটকের। তাই পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে বীচের সৌন্দর্য রক্ষায় গঠিত হয়েছে বীচ রক্ষা কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে পয়নিস্কাশনসহ হাতে নেওয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা। এর মধ্যে সমুদ্র গর্ভে যেভাবে খোঁড়খুঁড়ি শুরু হয়েছে এতে অল্প সময়ের মধ্যে বীচের পাশাপাশী ধ্বংসের কবলে পড়বে ঘর-বাড়ি, কৃষি জমি ও বনভূমি।
কিন্তু এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিণ্টন রায় বলেন, ‘বালি উত্তেলনের বিষয়ে এখনো কিছু জানা নেই।’ খুব দ্রুত খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
"