এইচ আর তুহিন, যশোর

  ২২ জানুয়ারি, ২০১৯

লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চালকদের হয়রানির অভিযোগ

যশোরে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানোর নামে যানবাহন চালকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত এক বছরেই সাড়ে ৩৮ হাজারের অধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। দৈনিক টার্গেট পূরণ করতে গিয়ে মামলার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৭ কোটির বেশি এবং যানবহন আটক করা হয়েছে যানবাহন সাড়ে ৪ সহ¯্রাধিক। তারপর যানজট নিরসন হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে মামলার টাকা জমা নিয়ে যানবাহনের চালকদের কোন রশিদ দেয়া হয় না।

চালকদের অভিযোগ, বেশি মামলা দিয়ে উর্ধ্বতনদের কাজ ‘ভাল কর্মকর্তা’ হিসেবে বিবেচিত হতে ও জরিমানার ৪০ শতাংশ অর্থ প্রাপ্তির সুবাদে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মামলা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে।

একাধিক ট্রাফিক কর্মকর্তা জানান, প্রতিমাসে ট্রাফিক পুলিশের মামলার টার্গেট থাকে। টার্গেট পূরণ না হলে তাকে অদক্ষ অফিসার হিসেবে গণ্য করা হয়। ট্রাফিক আইনে যশোরে প্রতি মাসে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। প্রতি মাসে মামলা হচ্ছে প্রায় গড়ে আড়াই হাজার।

যশোর ট্রাফিক পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৬১৫টি। এর বিপরীতে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ১০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেল, হালকা যান ও ইজিবাইকের ক্ষেত্রে। যানবাহন আটক করা হয়েছে ৪ হাজার ৭৭২টি। এক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলমেট ও ইন্সুরেন্স না থাকা, চালকসহ তিন আরোহীর কারণে বেশি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেল চালককে। অন্যদিকে যথাযথ কাগজপত্র না থাকা, যত্রতত্র পার্কিং, রুট পারমিট ও ফিটনেস না থাকার কারণে মামলা হয়েছে কাভার্ডভ্যান, ও হালকা যানের বিরুদ্ধে। অনেক ক্ষেত্রে একজন মোটর সাইকেল চালকের নামে একাধিক মামলা দেয়ারও নজির স্থাপন করেছে যশোর ট্রাফিক পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সার্জেন্ট জানান, মামলা কম হলেই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছি না। দিনের পর দিন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু মামলা দিয়ে যানজট নিরসনে কোন উন্নতি হচ্ছে না। আর মামলার টাকা জমা নিয়ে যানবাহনের চালকদের কোন রশিদ দেয়া হয় না।

অভিযোগ রয়েছে, চালকদের কাছ থেকে মামলার সর্বোচ্চ জরিমানার টাকা আদায় করা হলেও জমা দেওয়া হয় সর্বনি¤œ জরিমানার টাকা। যে কারনে যানবাহনের চালকদের জরিমানা পরিশোধের কোন রশিদ দেওয়া হয় না যশোর ট্রফিক অফিস থেকে।

যশোর ট্রাফিক বিভাগ থেকে আরও জানা যায়, জনবল কম থাকায় আগে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খেতে হতো। এখন জনবল পর্যাপ্ত থাকায় ঝামেলা কম হয়। বর্তমানে যশোর ট্রাফিক বিভাগে ৭৩ জন কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের ৫টি পদের বিপরীতে ৫ জনই কর্মরত আছেন। সার্জেন্টের ৯টি পদের বিপরীতে ৫ জন, টিএসআইয়ের ৩ টি পদের বিপরীতে ২ জন, এটিএসআইয়ের ১০টি পদের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত আছেন। এছাড়া কনস্টেবল কর্মরত রয়েছেন ৫১ জন।

গাড়ি চালক ও মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের অভিযোগ, যে কোনো একটা সুযোগ পেলেই মামলা ঠুকে দেন সার্জেন্টরা। কখনও অযথা হয়রানিমূলক মামলাও দেয়া হয়। মোটরসাইকেল চালক সেলিম জানান, শহরের দড়াটানায় মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র চেক করেন সার্জেন্ট নিশিকান্ত। সবকিছু ঠিক থাকার পরও কাগজ তাৎক্ষণিক দেখাতে না পারা, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা বা সার্জেন্টের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলা দেয়া হয়। একইভাবে প্রতিদিনই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস, ও প্রাইভেটকারের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে বলে চালকদের অভিযোগ।

যশোর ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, দিন দিন মানুষের গাড়ি বৃদ্ধি পেলেও পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। যে কারণে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাফিক পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও অনেক নামিদামি স্কুল, শপিংমলের পার্কিং নেই। রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং করা হয়। প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশকে এসব ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়।

যশোর নাগরিক আন্দোলনের নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, শুধু মামলা ও জরিমানা করে মানুষের আচরণের পরিবর্তন করা সম্ভব না। মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ট্রাফিক পুলিশকে অনভিপ্রেত ব্যবহার পরিবর্তন করে জনবান্ধব হতে হবে। একই সাথে ট্রাফিক ব্যবস্থা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ ও শপিংমলে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এসব ব্যাপারে যশোর ট্রফিক পুলিশের পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেনের সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা অযথা কাউকে হয়রানি করি না। গাড়ির কাগজপত্র ঠিক না থাকলে মামলা দেওয়া হয়। বিস্তারিত জানতে হলে এসপি অফিসে যোগাযোগ করেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close