রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯

যৌবন হারিয়েছে জমিদারের গোলপুকুর

যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় জমিদারদের অন্যতম স্মৃতিচিহ্ন গোলপুকুর তার যৌবন হারিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, একযুগ আগে সংস্কারের পর গোলপুকুর তার যৌবন ফিরে পেয়েছিল। কিন্তু অযতœ আর অবহেলায় গোলপুুকুর আবারও তার ফিরে পাওয়া যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। মুক্ত প্রকৃতির এ স্থানটিকে এখন তরুণ-তরুণীরা বেছে নিচ্ছে একান্তে সময় কাটানোর জন্য। সন্ধ্যা হলে আনাগোনা দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ মাদকসেবীদেরও। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে অযথা ঘোরাফেরা নিষেধ’ এ মর্মে সাইনবোর্ড টানিয়েই শুধু দায় সেরেছে।

জানা গেছে, গৌরীপুর উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের ভেতর গোলপুকুরের অবস্থান। শত বছর আগে গৌরীপুরের তৎকালীন জমিদার বজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী জমিদারবাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সাগরদীঘির আগে পাকা শান বাঁধানো সিঁড়িযুক্ত গোলপুকুর নির্মাণ করেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর গোলপুকুর অযতœ অবহেলায় পড়ে থেকে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল। ২০০৭ সালে তৎকালীন ইউএনও ইহসানুল হক গোলপুকুরটি সংস্কার করেন। এ সময় পুকুরের শান বাঁধানো ঘাটের সিঁড়ি সংস্কার করে পানির ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়। পানি ধরে রাখা ও বের হয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয় সেচের। আলোকসজ্জার পাশাপাশি গোলপুকুরের চারপাশে লাগানো হয় দুর্বাঘাস ও হরেক রকম ফুলের চারা। সৌন্দর্যবৃধির জন্য রোপণ করা হয় আরো বিভিন্ন রকম গাছ। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য ইট দিয়ে ঘাটের আদলে নির্মিত বেঞ্চ স্থাপন করা হয়।

এদিকে সংস্কারের পর দ্রুত সময়েই গোলপুকুর দর্শনার্থী ও ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদনের স্থানে পরিণত হয়। দূর দূরান্ত থেকেও মানুষজন ছুটে আসতো গোলপুকুর পাড়ে অবকাশ যাপনের জন্য। সবুজ গাছপালার নির্মল বাতাসে জুড়িয়ে নিত প্রাণ। কিন্তু সংস্কারের নতুনত্ব কাটতে না কাটতেই কয়েক বছরের মাথায় গোলপুকুর তার আকর্ষণ হারাতে শুরু করে।

গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গোলপুকুরে পানি নেই। পুকুরের তলায় দুর্বাঘাসের সবুজ চাদর। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পুকুরের সিড়ির রং উঠে যাচ্ছে, খসে পড়ছে পলেস্তরা। ফুলের গাছগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

লেখক ও প্রাবন্ধিক রণজিৎ কর বলেন, জমিদার বজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর উদ্যোগে নির্মিত শতবর্ষী পুরানো গোলপুকুরের অপূর্ব নির্মাণশৈলী এখনো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি তার সৌন্দর্য হারাতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছি।

জানতে চাইলে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম বলেন, ঐতিহাসিক নিদর্শন গোলপুকুরের হারানো সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও দর্শনার্থীদের বিনোদন সুবিধা বাড়াতে এখানে সেচব্যবস্থা চালু, ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ ও দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close