মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

কক্সবাজারে ৫ একরের পাহাড় কেটে বিলীন

হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকা মানা হচ্ছে না ডিসির নির্দেশ

কক্সবাজার শহরের পূর্ব লাইটহাউজ পাড়ার ফাতেরঘোনার নুরু সওদাগরের ঘোনা এলাকায় একযোগে চলছে পাহাড় কর্তন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও তা মানছে না পাহাড় খেকোরা। এনিয়ে পরিবেশদের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

পাহাড় কাটার ঘটনায় গত বছরের মে মাসের শুরুতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল সওদাগরের ঘোনা এলাকা পরিদর্শন করে। সে সময় কয়েকটি স্পট ঘুরে স্থানীয়দের পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন। পরে সেখানে সতর্কীকরণ ব্যানারও ঝুঁলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ৭ মাসের ব্যবধানে ওই এলাকার কয়েকটি পাহাড়ের পঞ্চাশ শতাংশই কেটে ফেলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পরিদর্শন টিম ফিরে যাওয়ার পর পাহাড় কাটা আরও বেড়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান। শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বহর নিয়ে জেলা প্রশাসক ঘুরে যাওয়ার পর আর কোন কর্মকর্তাই কোন খবর নেননি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শহরের ফাতেরঘোনা ও নুরু সওদাগরের ঘোনা এলাকায় অন্তত ২০টি স্পটে পাহাড় কাটার যজ্ঞ চলছে। সেখানে পাহাড় কাটছেন মৃত নুর আহমদ মিয়াজীর পুত্র আবুল কাসেম (কাসেম খলিফা), বেলাল, সলিম বহদ্দার, খলিল, সালাম সওদাগর, নুরুল আলম, সাজু, আবদুল্লাহ, আজিম সওদাগর, নাছির উদ্দিন, নওশাদ, আজাদ হাসান, রশিদা, মনজুর, আবদুল মানিক, আবুল কাসেম, ফাতেমা বেগম, হাসেম, ইমাম হোসেন, মোস্তাফিজ, মিজান, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারী আরিফ সহ অন্তত ৩০ ব্যক্তি। এর মধ্যে অধিকাংশই পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাকিরা পাহাড় কেটে চলেছেন।

স্থানীয়রা জানান, শহরের টেকপাড়ার মৃত নুরু সওদাগরের পুত্র আজাদ হাসান ও নওশাদ এবং পাহাড়তলী এলাকার আজিম সওদাগর ও নাছির উদ্দিন সিন্ডিকেট করে ৫ একরের এই বিশাল সরকারি পাহাড় খন্ড খন্ড করে বিক্রি করেছেন। সরকারি পাহাড় বিক্রি করে ইতিমধ্যেই তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেখানে তারা পাহাড় কেটে মাটিও বিক্রি করেছেন। আর ওই সরকারি পাহাড় কাটায় সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন স্থানীয় মৃত নূর আহমদ মিয়াজীর পুত্র আবুল কাসেম খলিফা ওরফে কাশেম সর্দার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ম্যাজিস্ট্রেট, পরিবেশ অধিদপ্তর, সাংবাদিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ম্যানেজ করার নামে কাশেম খলিফা পাহাড়ের দখলদারদের কাছ থেকে চাঁদাও আদায় করেন। জেলা প্রশাসকের টিম পরিদর্শন করে আসার পরও কাশেম খলিফা টাকা তুলেছেন বলে বেশ কয়েকজন পাহাড় কর্তনকারী জানান। এভাবে সেখানে প্রকাশ্যে দিনরাত পাহাড় কাটা চলছে।

জানতে চাইলে আজাদ হাসান ও নওশাদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘পাহাড়ে আমাদের রেজিস্টার সম্পদ আছে, তাই কাটা হয়েছে। এতে বলার কিছুই নেই।’ তবে স্থানীয়রা জানান তাদের জমি পাহাড়ের পাদদেশে আছে, এই অযুহাতে তারা পাহাড় কাটছে। স্থানীয় ভূমি নিশ্চিত করেছে, কাটা পাহাড়ে কোনো ব্যক্তি মালিকানা নেই।

পরিবেশবাদিরা বলছেন, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর, ভূমি প্রশাসন, কউকসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং জনা দশেক ম্যাজিষ্ট্রেট সরেজমিন পরিদর্শন করে আসার পরও পাহাড় কাটা বন্ধ না হওয়ায় প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। মূলতঃ সরকারি পাহাড় দখল ও পাহাড় কাটায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে না পারার ব্যর্থতার কারণেই পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।

পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আনম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘কোন পাহাড়ই অক্ষত থাকছে না। পাহাড় কর্তনকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি সরকারি পাহাড়গুলো সংরক্ষনের উদ্যোগ নিতে হবে।’ ইয়েস কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘এসব এলাকায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে দায়ের করা মামলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও সেখানে পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। অন্যথায় এভাবে সব পাহাড়ই বিলীন হয়ে যাবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ‘দ্রুত সেখানে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এইচ.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘খবর পেলেই আমরা পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ১৬ জানুয়ারিও অভিযান চালানো হয়েছে। ফাতেরঘোনা এলাকায়ও অভিযান চালানো হবে।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোন ছাড় নেই। উল্লেখিত স্পটে পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close