গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯

গুরুদাসপুরে এক বছরে বেড়েছে ৬৭৩ পুকুর

গুরুদাসপুরে অনানুমোদিতভাবে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন

নাটোরের গুরুদাসপুরে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিন ফসলি জমিতে যথেচ্ছাভাবে পুকুর খনন চলছে। গত এক বছরে (২০১৭-১৮) নতুন পুকুর বেড়েছে ৬৭৩টি। এতে কৃষিজমি কমে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করে’ এসব পুকুর খনন করছেন বলে অভিযোগ আছে।

সরকারি বিধি মোতাবেক, কৃষিজমিতে পুকুর খনন করা যাবে না। ক্ষেত্রবিশেষে পুকুর খননের প্রয়োজনীয়তা থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা যাবে। কিন্তু গুরুদাসপুর উপজেলায় এসবের কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। পুকুর কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি, উপজেলা প্রশাসনকে ১০ হাজার টাকা বিঘা চুক্তির মাসোয়ারা দিয়ে যথেচ্ছা ভাবে পুকুর খনন করছেন তারা।

গুরুদাসপুর উপজেলা মৎস বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৮-২০০৯ সালে পুকুরের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৩০টি। ২০০৯-১০ সালে পুকুর বেড়েছে ১২০টি। ২০১০-১১ সালে ৫০টি বেড়েছে। ২০১১-১২ সালে বেড়েছে ৪০টি। ২০১২-১৩ বছরে বেড়েছে- ১৮০টি। ২০১৩-১৪ সালে বেড়েছে ১২০টি। ২০১৪-১৫ সালে বেড়েছে ৬৫টি। ২০১৫-১৬ বেড়েছে ৪৭টি। ২০১৬-১৭ বেড়েছে ৩০টি। ২০১৭-১৮ সালে বেড়েছে ৬৭৩টি বেড়ে পুকুরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৫টি। তবে বে-সরকারি হিসেবে সরকারি পরিসংখ্যান আরো বেশি। পক্ষান্তরে গুরুদাসপুর উপজেলার মোট আয়তন ১৯৯ দশমিক ৪০ কিলোমিটার (৭৬ দশমিক ৯৯ বর্গ মাইল)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুদাসপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন এলাকায় বর্তমানে ২০টি পুকুর খনন চলছে। নাজিরপুর ইউনিয়নের চাকলের বিল ছাড়াও পাশের চাপিলা ইউনিয়নের মোকিমপুর ও ধানুড়া এলাকায় পুকুর কাটছেন চাপিলা ইউনিয়ন আ.লীগের সম্পাদক ও চাপিলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন ভুট্টুর ছোট ভাই মো. আয়নাল হোসেন ও ভাগনে মো. রুহুল আমিন। চাপিলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় পুকুর কাটছেন মো. হেলাল হোসেন ও মামুন হোসেন। অপর দিকে বিয়াঘাট ইউনিয়ন আ.লীগের সম্পাদক মো. রান্টু ইসলামসহ একই ইউনিয়নের কুমারখালি এলাকায় কাটছেন আরেক আ.লীগ নেতা মো. আব্দুল মান্নান ও মো. মোমিন আলী।

এদের মধ্যে মো. হেলাল হোসেন দাবী করেন, পুকুর কাটতে হলে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা করে প্রশাসনকে দিয়ে পুুকুর কাটতে হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষে একটি অফিসের পিয়ন এসে ওই চুক্তির টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। পুকুর কাটা চক্রের অন্য সদস্যদের বক্তব্য একই রকম। আর চাকলের বিলে পুকুর কাটার সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তি মো. ফজলুর রহমান ও মো. আসাদ সরদার দাবী করেন, অনেকেই পুকুর কেটেছেন-কাটছেন। তারা কাটলে দোষের কি?

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই পুকুর কাটার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ভেকু মেশিন (পুকুর কাটার যন্ত্র এসভেটর) ভাড়ায় এনে জমির মালিকদের সাথে চুক্তি ভিত্তিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর কেটে চলছেন। পুকুর খননের এসব মাটির বড় অংশ যাচ্ছে, উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। অনেকে আবার নিচু জায়গা ভরাট করছেন। পুকুর খননের এ মাটি বহনের ফলে আঞ্চলিক পাকা সড়কগুলোও ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে।

চাপিলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলাল উদ্দিন বলেন, তিনি পুকুর কাটার বিপক্ষে। তার নাম ভাঙ্গিয়ে ইউনিয়ন জুড়েই গনহারে পুকুর খনন চলছে। এটা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তবে তার ভাই-ভাতিজারা জড়িত নয়। পার্শ্ববর্তী নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত রানা বলেন, তিনি এক সপ্তাহ ধরে এলাকার বাইরে রয়েছেন। পুকুর কাটার বিষয়ে কিছু জানা নেই তার।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, পুকুর খননের বিষয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি একাধিকবার তুলেও পুকুর খনন বন্ধ হয়নি। কীভাবে কারা, কেমন করে পুকুর খনন করছেন জানেন না তিনি। তবে যথেচ্ছা ভাবে আবাদী জমিতে পুকুর খননে কৃষির অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, পুকুর খননের কোন অনুমতি নেই। কারা পুকুর কাটছেন খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। তবে প্রশাসনের পক্ষে কারা সুবিধা নিচ্ছেন সে বিষয়েও খোঁজ নিবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close