হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি

  ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯

হরিপুরে ব্রয়লার খামারে লোকসান

ক্ষতির মুখে আত্মকর্মসংস্থান বেকার হচ্ছেন খামারিরা

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বেকার সমস্যা সমাধানে নিজ পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্রয়লার মুরগির খামার গড়ে ছিলেন অনেকজন যুবক। প্রাণিসম্পদ বিভাগের বিশেষ সহযোগিতা ছাড়াই খামাররীদের নিকট পরামর্শ নিয়ে নিজ বাড়ির পাশেই এসব খামার গড়ে তুলে ছিলেন তারা। এভাবেই গত কয়েক বছরে উপজেলায় খামারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অর্ধশতাধিক।

শুরুতে এসব ব্রয়লারের খামার প্রতিমাসেই কিছু লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে লোকসানের মুখে পড়েছেন খামারীরা। ফলে একে একে স্বপ্নের খামার বন্ধ করে দিয়ে অনেকে আবারো বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ সুদিনের আশায় খামারে উৎপাদন কমিয়ে ধরে রেখেছেন ব্যবসার হাল।

জানা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে ৫টি আর অনিবদ্ধিত খামার রয়েছে ৪৫টি।

ক্ষতির কারণ হিসেবে খামারিদের বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমানে খাদ্য দ্রব্য, ঔষধ ও বাচ্চার অব্যাহত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় উৎপাদিত ব্রয়লারের দাম বাড়েনি, উল্লো কমছে। ফলে এখন লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, সামনে কোনো প্রকল্প এলে আমরা খামারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন কৌশল শেখাতে পারবো, পরামর্শ দিতে পারবো কিন্তু ব্রয়লারের খাবারের দাম কমানোর বিষয়ে কিছু করতে পারবো না।

আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে ব্রয়লার খামার করে ছিলেন উপজেলার টেংরিয়া ঝারবাড়ি গ্রামের আব্দুল হাকিম। কয়েক বছর ধরে এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, এই এলাকায় কয়েকটি ব্রয়লার মুরগির খামার গড়ে উঠেছে, কিন্তু কেউ টিকে রাখতে পারেনি। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ঔষধের দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং খামারে উৎপাদিত ব্রয়লার দাম কম হওয়ায় এ ব্যবসা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছি।’ তবুও ব্রয়লার মুগির উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে ভালো বাজারের আশায় ব্যবসাটা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি।

ঝারবাড়ি গ্রামের একাধিক ব্রয়লার খামারী প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, বর্তমানে ব্যবসার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রতি চালানেই লস গুনতে হচ্ছে। তারা বলেন, ৫-৭ বছর আগে ব্রয়লার মুরগির খাবার প্রতি ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ছিল ১৫শ থেকে ১৮শ টাকা। এখন সেই খাবারের বস্তার দাম ২ হাজার থেকে সাড়ে ২১শ টাকায় উঠে গেছে। একই ভাবে মুরগির বাচ্চার দাম প্রতি পিস ১২-১৫ টাকা থেকে বর্তমানে ৩০ টাকায় কিনতে হয়। সেই সঙ্গে বেড়েছে ঔষধ ও শ্রমিকের দামও। কিন্তু সেই অনুপাতে উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। খামারীরা জানান, ৫-৭ বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আর বর্তমানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

গত চালানে তাকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লস গুনতে হয়েছে বলে জানান আব্দুল হাকি। লসের পরও খামারে মুরগি উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছি, তাই ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে না। আশা করছি যদি হুট করে ব্রয়লারের দাম বেড়ে যায়।

দুই বছরে তিন লাখ টাকা লস হওয়ায় খামার বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জনাব। তার সাধের ব্রয়লার মুরগির খামার বর্তমানে খালি পারে আছে। একই এলাকার উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, তিন বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা লস খেয়ে ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা বন্ধ করেছি ১৮ সালে।

তবে উৎপাদন কময়ে ব্রয়লার মুরগির খামার ধরে রেখেছেন উপজেলা চৌরঙ্গী এলাকার কামরুলজ্জামান, হলদিবাড়ির কারিম উদ্দীন। এইসব খামার মালিকরা জানান, তারা সবাই নিজেদের বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিজ খরচে ব্রয়লারের খামার গড়ে তুল ছিলেন। কিন্তু গত বছর থেকে ব্রয়লারের খাদ্য ও বাচ্চার দাম যে হারে বেড়েছে সেই হারে উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। বর্তমানে দ্বিগুন মূল্যে ব্রয়লার বাচ্চা ও খাবার কিনেও ১০ বছর আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কোন খামারীই এ ব্যবসা ধরে রাখতে পারবে না।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেজুয়ানুল হক ইতিমধ্যেই অনেক ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ব্রয়লারের খাদ্যেও দাম অব্যাহত বৃদ্ধি ও ব্রয়লার মুরগির মাংসের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এতে করে আমাদের করার কিছু নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close