ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা)

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

মৌসুমের শেষ সময়ে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ

মৌসুমের শেষ দিকে এসে বঙ্গোপসাগর ও তার মোহনাসংলগ্ন বিষখালি, বলেশ্বর নদী ও গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় বাজার জমজমাট, দামও ক্রেতাদের নাগালে।

জানা গেছে, উপকূলীয় বরগুনা জেলার পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী, তালতলী, আমতলীসহ দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত দুই ধরনের জেলের বসবাস। এক ধরনের জেলে নদ-নদীতে মাছ ধরে, আরেক ধরনের জেলেরা ফিশিং ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকার করে। বলেশ্বর বিষখালিসহ উপকূলীয় নদ-নদীর ইলিশকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় লোকাল ইলিশ। যা আকারে বড় হয়, তৈলাক্ত ও সুস্বাদু হয়। আর গভীর সমুদ্রের ইলিশকে বলা হয় ফিশিং ইলিশ। যা আকারে খুব বেশি বড় হয় না।

মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় নদ-নদীতে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেদের অবরোধ পালন ফলপ্রসু হয়েছে। সাগর ও নদীতে ইলিশের পরিমাণ বাড়ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) পাথরঘাটায় আসছে।

গতকাল সোমবার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে ফিরে আসা ইলিশভর্তি ট্রলারগুলো ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে আছে। চলতি বছরে মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না পেলেও এখন কাঙ্খিত রুপালি ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটেছে জেলে, আড়ৎদার ও মৎস্যজীবিদের মাঝে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটায় এখন জেলে, আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ কেউ সেই প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। সব মিলিয়ে যেন মৌসুমের শেষ সময়ে আনন্দের জোয়ার বইছে। এদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় স্বস্তি ফিরেছে উপকূলীয় জেলে পল্লীগুলোতে। মাছ ভর্তি যান্ত্রিক নৌযান কিংবা মাছধরার (ফিশিং) ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে হাসি মুখে ফিরছেন। আবার অনেকে মাছ ধরার জন্য ছুটছেন সাগর পানে।

জেলেরা জানান, চলতি বছরে ইলিশ মৌসুমের প্রথম দিকে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মেলেনি। তাই ট্রলার মালিকসহ মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত সবাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেপল্লিতে আনন্দের বাতাস বইছে।

ইলিশ আড়তদার শেখর চন্দ্র বাবু বলেন, সাগর থেকে যেসব ট্রলার ঘাটে আসছে, তাদের প্রতেকেই কমবেশি মাছ পাচ্ছে। বিক্রি করেও ভালোই লাভ করছে তারা। ইলিশের দাম মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকাল সোমবার গ্রেড অনুযায়ী মণ প্রতি ইলিশ বিক্রি হয়েছে, ফিশিং প্রথমম গ্রেট ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা, দ্বিতীয় গ্রেডের ইলিশ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। লোকাল প্রথম গ্রেডের ইলিশ ২৪ থেকে ২৬ হাজার টাকায়। দ্বিতীয় গ্রেড ১৪ থেকে ১৬ হাজার ও কেজির ওপরে ইলিশ ৩০ থেকে ৩৮ হাজার টাকা ধরে কেনাবেচা চলছে। যা কদিন আগের চেয়ে প্রায় মণে আট থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি।

অবতরণ কেন্দ্রে আসা জুয়েল নামের এক পাইকার জানান, ঢাকা, যশোর, মাগুরা, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশ মাছ পাঠান তিনি। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসা মাছ অনেক ভালো। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ পাঠানো সহজ। এ বছর পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় সব এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ চালান করতে পারছেন বলে জানান তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম জানান, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞায় সরকারি আইন বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যাপক ভূমিকা ছিলো। বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা বিষয়ক সভা-সভাবেশ করা হয়েছে। এতে করে স্থানীয় জেলেদের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। যে কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি সফল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close