মো. আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)

  ২৬ নভেম্বর, ২০১৮

শীত ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে তালতলীর রাখাইন পল্লীতে

শীতকে সামনে রেখে বরগুনার তালতলী উপজেলার বালিয়াতলীর রাখাইন পাড়ায় নারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে। বছরের অধিকাংশ সময় অলস কাটালেও এসময়ে রাখাইন নারীদের দম ফেলার সময় থাকে না। এ কারনে পাড়ায় পাড়ায় তাঁতীদের কোলাহল আর কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি বেড়েছে মনের আনন্দ। আর চোখে মুখে দেখা গেছে হাঁসির ঝিলিক। তাঁতের বিভিন্ন ধরনের কাপড় বুননের খটখট শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে তাঁত সমৃদ্ধ রাখাইনদের এ জনপদ।

বার্মা থেকে আমদানীকৃত সুতা দিয়ে শাড়ী, লুঙ্গী, চাদর, শার্ট পিচ, ব্যাগ ও গামছা বুনে তাঁতীরা তাদের হস্তচালিত বস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। রাখাইন তাঁতীদের উৎপাদিত এ সকল বস্ত্রেরই কদর দক্ষিনাঞ্চলসহ দেশের সর্বত্রই। রাখাইনদের হস্তচালিত তাঁতে বিভিন্ন রং বেরঙ্গের সুতা দিয়ে তৈরী লতা পাতা ফুল ও বিভিন্ন কারু কাজে গড়া এ সকল তাঁত বস্ত্র যেন সকলের প্রিয়। সারা বছর এ সকল বস্ত্রের পুরো চাহিদা না থাকলেও ঈদ, কোরবানী ও শীত মৌসুমে ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। আর সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তাঁতীরা তাঁত কাপড় বুনন কাজে ব্যস্ত। তাদের কর্মব্যস্ততায় সরগরম হয়ে উঠেছে তালতলীর তাঁতীদের রাখাইন পাড়া গুলো।

আগাঠাকুর পাড়ার অংসিট জানান, তালতলীর বড়বগী ইউনিয়নের তালতলী পাড়া, ছাতনপাড়া, মনুখেপাড়া, আগাঠাকুরপাড়া, নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের সওদাগরপাড়া, তালুকদারপাড়া ও সোনারচর ইউনিয়নের কবিরাজপাড়া, তাঁতিপাড়া, লাউপাড়া ও অংকুজানপাড়ায় রাখাইন পল্লী গুলোতে ১০ থেকে ১২টি করে প্রায় অর্ধশতাধিক হস্তচালিত তাঁত রয়েছে।

কোন কোন পাড়ায় একই পরিবারে ২-৩টি পর্যন্ত তাঁত রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর পূর্বে তালতলীর এ তিনটি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত রাখাইন পাড়া ছিল। প্রতিটি পাড়াতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল অসংখ্য তাঁত কারখানা। সেগুলোতে বস্ত্র উৎপাদনের কাজ চলতো পুরোদমে। আর সে কালে তাঁত বস্ত্রের ওপরই নির্ভরছিল পুরো রাখাইন পরিবার। তাঁত পরিচালনার কাঁচা মালের অভাব ছিল খুব বেশী। বার্মা থেকে আনা তাঁতের সুতোসহ সকল কাঁচা মালের খরচ মিটিয়ে যা বিক্রি হত তাঁতে অনেক সময় প্রায়ই লোকসান দিতে হত তাঁতীদের। এমনি ভাবে তাঁতীরা এসব বস্ত্র উৎপাদন করতে গিয়ে সারা বছর ঋণে জর্জরিত হয়ে যায়। লোকসান গুনতে গুনতে প্রায় নিঃস্ব হয়ে যায় তাঁতীরা। কালক্রমে ঝিমিয়ে পড়ে তালতলীর রাখাইন তাঁত শিল্প। তবে কিছু কিছু রাখাইন পল্লীতে মাতৃপেশা হিসাবে হস্তচালিত তাঁতের কারখানা এখনও চালু রেখেছে অনেকে।

নারী তাঁতীরা শীতে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানোর জন্য এবং নিজেদের বাড়তি আয়ের আশায় দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মহা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বর্তমানে শীতের কারনে বাড়তি আয় হবে মনে করে ঝিমিয়ে পড়া তাঁতীরা আবার সচল হয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত পরিশ্রমেও ক্লান্তি বোধ করছেন না তারা।

রাখাইন সম্প্রদায়ের তাঁত কারখানায় লতা পাতা ফুল ফল ও প্রানী জগতের কারু কাজে তৈরী তাঁত বস্ত্র তালতলী শহরের অনেক দোকান পাটে পাওয়া যাচ্ছে। রাখাইনদের তাঁত বস্ত্র ক্রয় করতে দূর দুরান্ত থেকে অনেকে আসেন তালতলীতে। পরে তারা বাণিজ্যিক পরিসরে এ কাজ শুরু করলে দেশব্যাপী তার কদর বাড়ে। কিন্তু যথার্থ পদ্ধতিতে বিপনন বা রফতানী না করতে পারায় এবং সীমিত সংখ্যক ক্রেতা ও চাহিদার কারনে এ শিল্প বেশীদূর যেতে পারেনি।

বর্তমানে উপকূলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনসমাগম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে এসব বস্ত্রের। তাছাড়া যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতি হওযায় তাদের পন্যের প্রসার ঘটবে বলে রাখাইনরা এ আশা প্রকাশ করেন।

রাখাইন কমিউনিটি নেত্রী ও স্কুল শিক্ষিকা অংতেন তালুকদার জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে বসবাসরত রাখাইন সম্প্রদায়ের লোক সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছিল। কর্মসংস্থানের অভাবই ছিল তার প্রধান কারণ। বর্তমান সরকার আন্তরিকতায় এ অঞ্চলের প্রভূত উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও অস্তিÍত্ব টিকিয়ে রাখতে পারব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close