আজিজুল হাকিম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২১ নভেম্বর, ২০১৮

২২ শিক্ষার্থী নিয়ে দুই শিফট দ্বিতীয় শ্রেণিতে একমাত্র ছাত্র শাওন

রাস্তা না থাকায় কেউ ভর্তি হয় না মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

‘আমার আগে ও পরে কোন শিক্ষার্থী নেই। তাই আমার রোল নং ১। আমিই ক্লাসে ফাস্ট বয়, আমিই ক্লাসে লাস্ট বয়।’ বৃস্টির কারণে মাত্র একদিন স্কুলে আসতে পারেনি ২য় শ্রেনীর শিক্ষার্থী শাওন মোল্লা। শাওন ঘিওর উপজেলার নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণির একমাত্র শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ জন। সকালের শিফটে ৮ জন ও দুপুরে শিফটে ১৪ জন। এরমধ্যে ১ম শ্রেণিতে দুইজন বালক ও দুইজন বালিকা, ২য় শ্রেণিতে একজন বালক, ৩য় শ্রেণিতে একজন বালক ও তিন বালিকা, ৪র্থ শ্রেণিতে দুইজন বালক ও তিনবালিকা এবং ৫ম শ্রেণিতে তিনজন বালক ও দুইবালিকা রয়েছে।

এছাড়া নিমতা গ্রামের উত্তর দিকে খোলা চকে (ফসলের মাঠ) এক তলা বিশিষ্ট চার কক্ষের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে দক্ষিণ অংশ অর্ধ কিলোমিটার ছাড়া বাকী তিন দিকেই দুই কিলোমিটার এলাকায় কোন জনবসতি নেই। বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণি কক্ষে ৯ টি বেঞ্চ থাকলেও শাওন মোল্লা নামে একজন শিক্ষার্থীকে ইংরেজী পড়াচ্ছেন শিক্ষক বেলী মন্ডল। অন্য শ্রেণি কক্ষে ২-৩ জন করে শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন।

শিক্ষার্থী শাওন মোল্লা জানান, গত বছর শাওন ও আরেক জন শিক্ষার্থী শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। এ বছর ২য় শ্রেণিতে উঠার পর তার বন্ধু অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এখন সে একা একা ক্লাস করে। এতে তার ভালো লাগে না। ক্লাসে সহপাঠী থাকলে তাদের সাথে যেমন পড়াশুনায় প্রতিযোগিতা করা যে তো, তেমনি তাদের সাথে খেলাধুলাও করা যে তো। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার মন্ডল জানান, ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে সরকারি করণ হয় ২০১৩ সালে। ওই সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্য ছিল প্রায় ২ শ। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ক্যাচমেন্ট এলাকায় জনবসতি কম থাকায় শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ৪ জন।

এ দিকে বিদ্যালয়টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় মোট লোক সংখ্যা সাড়ে ৬শ মতো। চলতি বছর ১৩ জন শিশু ভর্তি হওয়ার উপযুক্ত ছিল। কিন্তু নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে মাত্র একজন ছেলে ও ২ জন মেয়ে। বাকী শিশুরা ভর্তি হয়েছে অন্য বিদ্যালয়ে। তবে বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষায় গত ৩ বছরে যে কয়জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলো সবাই পাশ করেছে।এবছর ৫জন শিক্ষার্থী সমাপনিতে অংশ নিচ্ছেন।

শিক্ষক বেলী মন্ডল জানান, শিক্ষার্থী কম থাকায় তাদেরও পড়াতে ভালো লাগে না। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে কি হবে, এছাড়া বিদ্যালয়ে আসার মতো কোন রাস্তা নেই, বর্ষা সময় নৌকা ছাড়া আসা যায় না। এসব চিন্তা করেই অনেকই তাদের সন্তানদের আমাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন না।

৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশির মোল্লার মা শেফালি বেগম জানান, তার ৪ সন্তানের মধ্যে ৩ মেয়েই এই বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করে গেছে। এক মাত্র ছেলে শিশিরও এখানেই পড়ে। শিক্ষকরা অনেক যতœ করে তাদের সন্তানদের পড়ান। কিন্তু তার পরও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে আসার মতো কোন রাস্তা নেই। বিদ্যালয়ে আশে পাশে কোন দোকান নেই। বর্ষা শুরু সাথে সাথে বিদ্যালয়ে চার দিকে পানি উঠে যায়।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছবেদ আলী জানান, বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকায় মধ্য নিমতা গ্রামের পাশে রয়েছে ঘিওর উপজেলার বাশাইল, শিবালয় উপজেলার পাড়াগ্রাম ও হরিরামপুর বিজয় নগর। এই ৩টি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই সব বিদ্যালয়ে ২শ থেকে ৩শ করে শিক্ষার্থী থাকলে নিমতা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। বিদ্যালয়টির বয়স ৪৫ বছর হলেও বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার কোন রাস্তা হয়নি। এছাড়া নিমতা এলাকায় অধিকাংশ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস করে। জন শূণ্যতার কারণে ভর্তি হওয়ার মতো শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন বিদ্যালয়টি যাতায়াতের জন্য রাস্তা হলে আগামীতে ভর্তি হওয়ার শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি হবে।

ঘিওর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ নাজনীন আলম জানান, নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মূল সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগের রাস্তা। বছরের কয়েক মাস বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তা পানি কাদায় তলিয়ে থাকে। এসব কারনে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না এবং ক্যাচমেন্ট এলাকায় মা সমাবেশ ছাড়াও জনপ্রতিনিধি এবং গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সভা করা হয়। যাতে শিশুরা ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close