দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ

  ২০ নভেম্বর, ২০১৮

গোপালগঞ্জে মৌসুমি দাদন ব্যবসায়ীরা সক্রিয়

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলাসহ কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দাদন ব্যবসায়ীরা। দিন দিন সুদের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। উপজেলার বিলাঞ্চলের সাধারণ কৃষকরা স্থানীয় সুদখোর দাদন ব্যবসায়ী ও এনজিও’র হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নেই মান্ধাতা আমলের চাষাবাদের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতি। বেড়েছে ইরি-বোরো ফসলের আবাদ। আর এসব ধান চাষাবাদে প্রয়োজন হচ্ছে পর্যাপ্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। এদিকে সেচ, সার ও কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এ বাড়তি খরচ জোগানোর জন্য কৃষকদের নির্ভর করতে হয় সুদখোর মহাজনদের ওপর। আর এ সুযোগে লগ্নি ব্যবসায়ী নামধারী সুদখোর দাদন ব্যবসায়ীরা ফাঁদ পেতে বসে থাকে। যারা ২/৩ মাসের জন্য ৫০ ভাগ লাভে টাকা ধার দেয়। আবার অনেকে এক হাজার টাকা ধার দিয়ে ২ মাস পরে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করে। এছাড়া দাদন ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কৃষি উপকরণও দিয়ে থাকেন। তাদের নিয়ম হলো ডিজেল সার, তেল, কীটনাশক কৃষকের নিকট বাকিতে বিক্রি করে। ধান কাটার পরে বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন মূল্য পরিশোধ করতে হয়।

কাশিয়ানী বেথুড়ী গ্রামের লিটু জানান, ব্যাংক ঋণ পেতে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। ঝামেলা এড়াতে আমি গ্রামের এক মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে ধান চাষাবাদ করেছি। ইরি বোরো মৌসুমের শুরুতে এ অঞ্চলের অভাবী কৃষকদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগে এক হাজার টাকায় এক মন ধান দেওয়ার শর্তে টাকা দিচ্ছে দাদন ব্যবসায়ীরা। মৌসুম শেষে কৃষকদের কষ্টে অর্জিত ফসলের অধিকাংশ চলে যায় দাদন ব্যবসায়ী মহাজনদের গোলায়। ফলে সাধারন কৃষকদের ৫৩-৭০ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হয়।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশি লোভের আশায় গ্রামের প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তিরা এ লগ্নি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে এ ধরনের সুদখোর দাদন ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠছে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ, দরিদ্র কৃষকেরা ফসল উৎপাদনে প্রতি বছর কমবেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। তবুও এলাকার প্রভাবশালী সুদখোর দাদন ব্যবসায়ীদের ভয়ে হালের গরু-বলদ, ঘরের আসবাবপত্র, ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে প্রদত্ত টাকা পরিশোধ করে সর্বশ্বান্ত হয়ে থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close