কে এম রুবেল, ফরিদপুর

  ২০ নভেম্বর, ২০১৮

সরকারি সুবিধাবঞ্চিত বৃহত্তর ফরিদপুরের একমাত্র নৌবন্দর

‘নাব্য সংকট দূরীভূত না হলে মালামাল পরিবহন কমে যাবে এতে কমে যাবে রাজস্ব আদায়’

দুই বছর ধরে ফরিদপুর শহরতলির সিঅ্যান্ডবি ঘাটটি ঘোষণা করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ নৌবন্দর হিসেবে। কিন্তু অদ্যবধি সেখানে নৌবন্দরের প্রাপ্য কোনো সুযোগ সুবিধাই দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এমনকি শীত মৌসুমের আগেই নাব্য সংকটে প্রায় অচল হতে বসেছে বন্দরটি।

বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের একমাত্র নৌ-বন্দর এটি। পদ্মা নদীর তীরে শতবছরের ঐহিত্যবাহী এই ঘাটটিতে নৌবন্দরে উন্নীত হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলো পণ্য পরিবহনকারি ও ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও প্রত্যাশা করেছিলো তাদের জীবন মান উন্নয়নের। কার্যত সেখানে দীর্ঘ সময়ে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন চোখে না পড়ায় হতাশ হয়েছেন স্থানীয়রা। ফরিদপুর নৌ-বন্দরের কয়লা ও রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিআইডব্লিুউটিএ’র উদাসিনতায় আজও সংস্থাটির নিজস্ব কোন স্থায়ী জায়গা বা অফিস নেই, নেই সংযোগ সড়কও। তিনি বলেন, একটি মাত্র পন্টুন দিয়ে ধীর গতিতে নামছে বন্দরে আসা জাহাজ, কার্গোর মালামাল।

মাল বোঝাই একটি জাহাজের নাবিক মো. দীন ইসলাম জানান, বন্দরে সার, সিমেন্ট, চাল, পাথর, কয়লা, বালুসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী জাহাজগুলো সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষায়থাকতে হয় পদ্মা নদীতে। এতে প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়ছে এই রুটে পণ্য বহনকারী জাহাজ-কার্গো মালিক ও পন্য সরবরহকারী ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বন্দর সচল না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ছে ঘাট শ্রমিকরা।

কুষ্টিয়ার সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান জানান, সময় মত মালামাল না আসায় ও আটকে থাকা নৌযান থেকে ছোট ছোট নৌযান ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে ঘাটে আনায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

ফরিদপুর নদী-বন্দরের কুলি শ্রমিকের সরদার জাফর শেখ জানান, এই বন্দরের ৬ হাজার বেশি শ্রমিকের জীবন-জীবিকা রয়েছে। যাদের একটি বড় অংশ এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, নদীর নাব্যতা না থাকায় কার্গো জাহাজ এখন কম আসছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা। বন্দর ইজারাদার কর্তৃপক্ষ নাফিজুর রহমাস তাপস জানান, বর্তমান এলজিআরডি মন্ত্রীর চেষ্টায় সিএন্ডবি ঘাট ফরিদপুর নদী বন্দরে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য আসে ফরিদপুর নদী বন্দরে। আর ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন গরু ও ধান, পাটসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়াও বিভিন্ন বন্দর থেকে সিমেন্ট, বালু, কয়লা, রডসহ কমপক্ষে ৫০ ধরণের পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়।

তিনি বলেন, নাব্যতা সংকট দূরীভূত না হলে মালামাল পরিবহন কমে যাবে, এতে কমে যাবে রাজস্ব আদায়। ‘অতি সত্তর ড্রেজিং করে ফরিদপুর নৌ-বন্দরে পন্যবাহী জাহাজ যাতায়াতের সুব্যবস্থা করার পাশাপাশি বন্দরের নূন্যতম সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ফরিদপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ফরিদপুর নদী বন্দরটি এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে গুরুত্বর্পূন। এই ঘাটটি বন্দর ঘোষণার পরেও বিআইডব্লিউটিএ দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ড না থাকায় বন্দরটি দিনদিন তার ঐহিত্য হারাতে বসেছে। তিনি নদীতে নাব্যতা সমস্যা নিরসনসহ বন্দরের সরকারি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন। বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার সেলিম রেজা ফরিদপুর বন্দরের বিষয়ে বলেন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আমরা এরই মধ্যে জরিপের কাজ শুরু করেছি। জরিপ শেষে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এছাড়াও বন্দরের বড় ধরণের উন্নয়ন কাজের জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close