ইয়াকুব আলী, চৌগাছা (যশোর)

  ০৯ নভেম্বর, ২০১৮

চৌগাছা ভূমিহীন পুনর্বাসন প্রকল্প

খসে পড়ছে বেড়া, টিনের চাল ভেঙে যাচ্ছে খুঁটি, মেঝে

যশোরের চৌগাছার ভূমিহীনদের পুনর্বাসন প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামগুলো এখন বেহাল। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়ছে গ্রামের ঘরের মেঝে, বেড়া, টিনের চাল ও খুঁটিগুলো। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ওই সব ঘরের বাসিন্দারা অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন।

আবাসনে বসবাসরত ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঘরবাড়ি রক্ষার করার মতো কোনো অর্থ তাদের নেই। রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও বিশুদ্ধ পানির অভাব ও স্যানিটেশন সমস্যায় ভূগছেন। কেউ এই নিয়ে খোঁজও নিচ্ছেন না। এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, দরিদ্র-অসহায়দের বসবাসের জন্য সরকারি ভাবে ঘরবাড়ি করে দিলেও, প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য নতুন করে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ২০০৭ সালে ভূমিহীন অসহায় ও পরিবারের পূর্নবাসন করতে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর ও হাকিমপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর বাওড় সংলগ্ন, ধুলিয়ানী ইউনিয়নের শাহাজাদপুর, নারায়নপুর ইউনিয়নের পেটভরা গ্রামে সরকারী খাস জমিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ৪টি আবাসন প্রকল্পের অধীনে গুচ্ছ গ্রাম তৈরি করা হয়। ওই সব গুচ্ছ গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনশ ভূমিহীন অসহায় পরিবারের নামে বরাদ্ধ দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ওই সব ঘরবাড়ি সংস্কারের অভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। সেখানে বসসবাসের জন্য অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গুচ্ছ গ্রামে এই দৃশ্য ধরা পড়ে।

হায়াতপুর গুচ্ছগ্রামে মোট ৬০টি ভূমিহীন পরিবারকে বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪০টি পরিবার ইতোমধ্যে অন্যত্রে চলে গেছে। বর্তমানে ২০টি পরিবারের মোট ৮০ জন লোক বসবাস করছেন। এর মধ্যে শিশু ১৪ জন, বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসায় পড়–য়া শিক্ষার্থী রয়েছে ১৮ জন, বিভিন্ন বয়সের ২৫ জন, বৃদ্ধ ৯ জন, প্রতিবন্ধি রয়েছে ৬ জন, বিধবা ৫ জন এবং স্বামী পরিত্যক্তা রয়েছেন ৩ জন। এ সব পরিবারের সদস্যরা ভিক্ষাবৃত্তি, বাড়ীতে-বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ ও পরের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান বলে পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

আরেক গুচ্ছগ্রাম যাত্রাপুর আবাসন প্রকল্পে পূর্নবাসিত হয় ৪০টি পরিবারকে। তবে এর মধ্যে ২০টি পরিবার চলে গেছে। সেখানকার ঘরের মেঝের প্লাস্টারগুলো উঠে গেছে। টিনের চাল পুরাটাই নষ্ট হয়ে গেছে। জংধরে ঝরে পড়ছে বেড়ার টিন। তাদের বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন নেই। ফলে বেশীর ভাগ পরিবার আবাসন থেকে চলে গেছে।

শাহাজাদপুর গুচ্ছ গ্রামে পর্যায়ক্রমে ৪০টি পরিবার পূর্নবসিত হয়। এরমধ্যে ২০টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন। বাকি ২০টি পরিবারের ৬১জন লোক বসবাস করে। এর মধ্যে শিশু ৬ জন, বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছে ১১ জন, বৃদ্ধ ৭ জন প্রতিবন্ধী রয়েছে ৪ জন, বিধবা ৫ জন এবং স্বামী পরিত্যক্তা রয়েছেন ৪ জন। এ সব পরিবারের সদস্যরা ভিক্ষাবৃত্তি ও পরের জমিতে কামলার কাজ করে সংসার চালায়। ওই সব গুচ্ছ গ্রামের বসিন্দারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

হায়াতপুর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা শাহাজান আলী, সরজান বিবি, আব্দুল গফুর, আমজাদ হোসেন, ইকবাল হোসেনসহ অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। প্রতিদিনের সংবাদকে তারা বলেন, আমরা খুবই অসহায়। বর্তমান সরকারের আমলে সবার ভাগ্য বদলেছে কিন্তু আমাদের কোন উন্নয়ন হয়নি। ঘরের বেড়া,চাল,মেঝে ও খুঁটিগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। সংস্কারের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমরা বসবাস করছি। বর্তমানে এখানে একদিকে জীবনের ঝুঁকি অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। আমাদের সমস্যার কথা বিগত নির্বাহী কর্মকতা নার্গিস পারভিন জানিয়ে ছিলাম, কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

হায়াতপুর আবাসন প্রকল্পের সভাপতি ফারুক হোসেন এ বিষয়ে প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘বর্তমান সরকারের ঘোষিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিভিন্ন কর্মসূচী বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে রেশন কার্ডও তাদের ভাগ্যে জোটেনি।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুল আলম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, সরকার থাকার জন্য ঘরবাড়ি করে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বর্তমানে এ প্রকল্পের জন্য সরকার নতুন করে কোন বাজেট সরকার দিচ্ছে না। তবে সরকারি অন্য কোন অনুদান থেকে তাদের গুচ্ছগ্রামের সমস্যাগুলো খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close