পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি

  ০৫ নভেম্বর, ২০১৮

পাইকগাছায় কপোতাক্ষে ভাঙন

ব্লক স্থাপন নয় লুব কাটিং চায় ক্ষতিগ্রস্তরা

খুলনার পাইকগাছায় অব্যাহত কপোতাক্ষের ভাঙন কবলিত এলাকায় অবশেষে বালুর বস্তা দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। তারপরও থেমে নেই কপোতাক্ষ পাড় সংলগ্ন হাবিবনগর এলাকার নদী ভাঙন। একদিকে ভাঙছে কপোতাক্ষ আর কাঁদছে শত শত ভিটা বাড়ী হারানো অসহায় পরিবার। তাদের দাবী আমরা সাহায্য চাই না, বালুর বস্তা বা ব্লক স্থাপন নয় লুব কাটিং চায় ক্ষতিগ্রস্থরা।

সর্বগ্রাসী কপোতাক্ষ নদের আগ্রাসনে দিশেহারা এ অঞ্চলের মানুষ। বসত ভিটা নয়, শেষ ঠিকানার (কবর) জায়গাটুকুও কিনেছে অন্য অঞ্চলে। জোঁয়ার-ভাটার নির্মম রসিকতায় প্রতি ঘন্টায় বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের মানচিত্র। ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে পুড়ছে তাদের কপাল। অভাবেব দাবানলে ক্ষুধার্ত শিশুর হাহাকার আর বা¯ুÍহারা হওয়ার যন্ত্রনায় কাতর কূলের মানুষ। শত দুঃখ-কষ্টের মাঝেও তাদের চোখে মুখে আত্ম প্রত্যায়ের ছাপ।

জানা যায়, ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ মো. নূরুল হক, পানি সম্পদ মন্ত্রী বরাবর এক ডিও লেটারের মাধ্যমে একই দাবি জানিয়েছেন। তিনি স্মারকে উল্লেখ করেন, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সভ্যতার প্রাচীনত্বের সঙ্গে কপোতাক্ষ গভীর ভাবে যুক্ত। বর্তমান সরকার কপোতাক্ষের অপমৃত্যু ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে খনন কাজ পরিচালনা করছে। ইতিপূর্বে কপোতাক্ষের কপিলমুনি থেকে বালিয়া অংশের খনন কাজ শেষ হয়েছে। বালিয়া থেকে নিন্মগামী অংশের তীব্র ¯্রােতের কারনে উপজেলার আগড়ঘাটা, রামনাথপুর, দরগাহমহল, হাবিবনগরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত পরিবার ভিটা মাটি ছাড়া। ভাঙন রোধ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে ব্লক স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নদী পাড়ের মানুষ আমরা, নদীর গতিপথ ও জোয়ার-ভাটার সাথে আজন্ম পরিচয়। এ অঞ্চলের ভাঙন রোধে ব্লক স্থাপনের যে প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে তা কোন ভাবেই বাস্তব সম্মত নয়। ইতিপূর্বে কয়েকবার ব্লক স্থাপন করে সরকারি টাকা অপচয় হয়েছে। তিনি মামুদকাটির পূর্বভাগ থেকে সিলেমানপুর পর্যন্ত কপোতাক্ষের পুরানো প্রবাহ বরাবর লুব কাটিংয়ের দাবি জানান।

সরেজমিনে ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কপোতাক্ষের অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙনে শুধু বাপ-দাদার ভিটা মাটিই নয়, ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, কবর স্থানসহ হাজার হাজার ফলজ ও বনজ বৃক্ষ। উপজেলার কপিলমুনি ও হরিঢালী ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার হয়েছে গৃহহীন। পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এ ভাঙনে। ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গে আলাপ করে জান যায়, প্রায় দুই যুগ ধরে প্রতিনিয়ত ভাঙছে নদী, গৃহহীনদের তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ। ইতোমধ্যে অনেকে বাস্তভিটা ছেড়ে হয়েছে উদ্বাস্ত। সব হারিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছে কেউ কেউ। দরগাহমহলের মেহেরুন্নেছার (৬৫) অভিযোগের সঙ্গে উঠে আসে বেঁচে থাকার আত্মবিশ্বাসে সাহসী পদক্ষেপের কথা, পাঁচবার বাড়ি ভেঙেছে তার। এলাকাবাসীর দাবি, চলমান সমস্যা সমাধানে যেন মূল ম্যাপ অনুযায়ী কপোতাক্ষ খনন করা হয়। তাহলে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁইটিও হবে নিজ ঠিকানায়। কপোতাক্ষ ফিরে পাবে তার চিরচেনা গতিপথ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close