এ আর রাশেদ, ইবি

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

ইবিতে বাড়ছে আত্মহত্যা প্রবণতা

গত ২ বছরে পাঁচ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দিন দিন বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের ঘটনা। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৯ অক্টবর) এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যদিয়ে গত দুই বছরে পাঁচ শিক্ষার্থী চলে গেল না ফেরার দেশে। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় আত্মহত্যা বিরোধী সেমিনার, সিপে¥াজিয়াম করা হলেও থামছে না আত্মহননের ঘটনা। পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক অসচেতনতা, মানসিক বিষন্মতা, একাকিত্বতা, নৈতিকতার অভাব ও প্রেমজনিত কারণে দিন দিন এমন ঘটনা ঘটছে অভিমত বলে বিশেষজ্ঞদের।

ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশনের সদস্য মনোবিজ্ঞানী ডা. সাইদ এনামের মতে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন প্রতিবছরের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘ওয়ার্কিং টুগেদার টু প্রিভেন্ট সুইসাইড’ অর্থাৎ ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসঙ্গে’। একজন মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন এর মধ্যে ব্যক্তিত্ব্যে সমস্যা, গুরুতর মানসিক রোগ বা স্বল্পতার মানসিক, মাদকাসক্তি, এনজাইটি, ডিপ্রেশন অথবা প্ররোচনা ইত্যাদি।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের নাজমুল হাসান নামের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ বিষয়ে নাজমুলের সহপাঠীরা জানায়, নাজমুল হাই প্রেসারের রোগী। বেশ কিছুদিন ধরে সে অসুস্থ্যতার মধ্যে ছিল। প্রতিদিন সে ১২টি করে ট্যাবলেট সেবন করত এবং সবসময় বিষণœতা ও হতাশার মধ্যে থাকতো।

এর আগে গত ৯ আগস্ট মাত্র দুই ঘন্টার ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী মুমতাহেনা আফরোজ গলায় ফাঁস দিয়ে এবং তার সহপাঠী রোকনুজ্জামান ট্রেনের নিচে লাফ দিয়ে কাটা পড়ে মারা যায়। রোকনুজ্জামান ও মুমতাহেনার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়।

চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইমুজ্জামান খান সাইম ক্যাম্পাসের পার্শ¦বর্তী এক মেসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। জানা যায়, প্রেমিকার প্রতি অভিমান করে চিরকুট লিখে সে আত্মহত্যার মতো দু:সাহসিক ঘটনা ঘটায়।

এর আগে ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও রাষ্ট্রনীতি বিভাগের মাস্টার্সের (স্নাতকোত্তর) শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান আতিক কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড় এলাকার এক মেসে ফানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। জানা যায়, আত্মহত্যার আগে সে তার অসুস্থতার কথা চিরকুটে লিখে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার পথে পাড়ি জমায়।

এ দিকে গত কয়েক বছরের ব্যাধানে বিশ^বিদ্যালয়ের এতগুলো প্রাণ চলে যাওয়ায় গতকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অভিমত ব্যাক্ত করেছেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি ক্যাম্পাসে শুধুমাত্র সেমিনার সিপে¥াজিয়াম করে আত্মহত্য প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি বিশ^বিদ্যালয়ে একজন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ অথবা শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা, পারিবারিক সুসম্পর্ক ও জীবনের মূল্য সম্পর্কে সচেতন করা দরকার।

বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল বলেন, ‘আমাদের দেশে আত্মহত্যা একটি অপরাধ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী, আত্মহত্যায় প্রচারণাকারীকেও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আত্মহত্যার প্রবনতা কমাতে হলে প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘আত্মহত্যার বিষয়টি অত্যান্ত দু:খজনক। আমরা বিষয়টিকে খুব গুরুত্বে সাথে নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন রকমের প্রাতিষ্ঠানিক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি তারা যেন কোনভাবেই তাদের মূল্যবান প্রাণ নষ্ট না করে। আমাদের যে মেডিকেল পুল রয়েছে সেখানে একজন সাইকিয়াট্রিক নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ছাত্র উপদেষ্টা তাদের দেখভাল করবেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের যেকোন সমস্যার কথা তাদের কাছে তুলে ধরবেন এবং তারা এ ব্যাপারে পরামর্শ দিবেন। সবচেয়ে বড়কথা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জীবনবোধ এবং জীবনের মূল্য আরো বেশি জাগ্রত করতে হবে তাহলেই আত্মহত্যা প্রবনতা কমানো যাবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close