মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ২২ অক্টোবর, ২০১৮

কক্সবাজারে গরিবের ভর্তুকির আটা কালোবাজারে

কক্সবাজারে গরিবের জন্য ওএমএস’র আটা খোলা বাজারে বিক্রি না হয়ে সরাসরি চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। প্রতিটি ওএমএস সেন্টারে একদিন পর পর এক মেট্রিক টন করে আটা বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না ডিলাররা। অবিক্রিত আটা বস্তায় বস্তায় বাইরে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। আর ওএমএস সেন্টারে যা বিক্রি করা হচ্ছে তার অধিকাংশই নিন্মমানের। এভাবে গত ২৬ দিনে কক্সবাজার শহরের ১২টি ওএমএস ডিলার পয়েন্টে বরাদ্দকৃত ৭৮ মেট্রিক টন গম থেকে প্রায় ৫০ মেট্রিক টন গমের আটা লুটে নিয়েছে কালোবাজারিরা। বর্তমানে নতুন বরাদ্দ হওয়া আরও ২০৩ মেট্রিক টন গম উত্তোলন করে লুটপাটের পাঁয়তারা করছে চক্রটি। ওএমএস ডিলারদের কেন্দ্র্রগুলোতে প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে চক্রটি লুটপাটে মেতে উঠেছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকজন চাল কিনতে যখন হিমশিম অবস্থায় তখন সরকার ন্যায্যমূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি’র (ওএমএস) আওতায় আটা বিক্রি শুরু করে। কক্সবাজার শহরে খাদ্য বিভাগের এই কার্যক্রম শুরু হয় গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে। শহরের ১২টি ওএমএস সেন্টারে ১২ জন ডিলারের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করে খাদ্য বিভাগ। প্রথমে ওই খাতে ৭৮ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব গম তুলেও নেয়া হয়। এখন আরও ২০৩ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকেও ১২০ মেট্রিক টন গম তুলে নেয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, প্রতি টন গমের সরকারি দর ২৯ হাজার ৩৭ টাকা হলেও গরীবের জন্য শুধুমাত্র ১৪ হাজার টাকায় গম দিচ্ছে সরকার। এছাড়া বাজারে যে আটা প্রতি কেজি ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা ওএমএস সেন্টারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৮ টাকায়। যে চার মিল মালিক এসব গম মিলিং এর জন্য নিচ্ছে তারা ডিলারদের মধ্যে আটা সরবরাহ করছে। কিন্তু ডিলাররা এসব আটা ওএমএস সেন্টারে বিক্রি না করে চড়াদামে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলা শহরের বাস টার্মিনাল, সমিতিপাড়া, ঘোনারপাড়া, বৈদ্যঘোনা, টেকপাড়া, রুমালিয়ারছড়া, আলিরজাহাল, নুনিয়াছড়া, কলাতলী, ঝাউতলা, বাহারছড়া এবং নতুন বাহারছড়া এলাকায় থাকা ওএমএস সেন্টারগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই। বেশ কয়েকটি ওএমএস সেন্টার বন্ধ থাকে প্রায় সময়। এসব ওএমএস সেন্টার থেকে প্রায় প্রতি রাতেই বস্তায় বস্তায় আটা কালোবাজারে পাচার করে দেয়া হয়। রেজিষ্ট্রার খাতায় ভুয়া নাম ও টিপসহি দিয়ে হিসাব দেখানো হয়ে থাকে। সকাল-বিকাল এসব ওএমএস সেন্টারে তদারকীর কথা থাকলেও কোন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে যান না। কয়েকদিন পর পর রেজিষ্ট্রার খাতায় হিসাব মিলিয়ে স্বাক্ষর করেন তারা।

তবে বেশ কয়েকজন ওএমএস ডিলার দাবী করেন- জেলায় আটার চাহিদা কম। তাই আটা তেমন বিক্রি হয় না। ওএমএস সেন্টারে আটার পরিবর্তে আতপ চাল সরবরাহের দাবী জানান তারা।

অনিয়ম ও তদারকীর বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেবাশীষ চাকমা বলেন, ‘কক্সবাজারে আটার চাহিদা তেমন না থাকায় বিক্রিও কম। তবে ডিলারদের কিছু অনিয়ম ও গাফিলতির বিষয়ে আমিও শুনেছি। সেন্টারগুলো তদারক করা হচ্ছে।’ অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান বলেন, ‘গরীবদের জন্য সরকারের ভতূর্কি দিয়ে সরবরাহ করা ওএমএস সেন্টারে কোন অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। দ্রুত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য, এধরণের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত ১৭ নভেম্বর তৎকালীন ইউএনও নোমান হোসেন অভিযান চালিয়ে দুইটি ওএমএস সেন্টার সীলগালা করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close