আকিব হৃদয়, কিশোরগঞ্জ

  ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ

সাত বছরেও চালু হয়নি হাসপাতালের কার্যক্রম

প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত হয় কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। নানা সংকটে কলেজের ৭ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি হাসপাতালের কার্যক্রম। ফলে এলাকাবাসী পাচ্ছেন না কাক্সিক্ষত সেবা। বাস্তবমুখী জ্ঞানার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। এ দুরবস্থার জন্য অভিযোগের তীর রয়েছে কলেজ অধ্যক্ষের দিকে। বলা হচ্ছে, তার দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণেই কলেজের সার্বিক উন্নয়ন ও শিক্ষা কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়েছে। এ সমস্যার উত্তরণ চেয়ে চিকিৎসক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, জেলার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও জেলা বিএমএর নেতারা অধ্যক্ষকে কলেজের বিষয়ে একাধিকবার দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ করার পরও তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। আবার এখান থেকেই প্রতি মাসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। তার গাফিলতির তালিকা অনেক দীর্ঘ। এ অবস্থায় গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা বিএমএ সভাপতি মাহবুব ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব বাদল, সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান ও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের উপপরিচালক সুলতানা রাজিয়ার নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রপতিকে তারা জানান, অধ্যক্ষের তৎপরতা না থাকায় মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি আজও চালু হয়নি। ফলে আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার মানুষ। রাষ্ট্রপতি চিকিৎসকদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। বিষয়টি দেখবেন বলে তিনি তাদের আশ্বস্ত করেন।

মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকায় অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকসহ ৬৮ জন চিকিৎসক প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে থাকেন না। নিয়ম অনুযায়ী কলেজে ক্লাস নেওয়ার পর তাদের জেলার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা। তবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শিক্ষক নির্ধারিত দিনে পাঠদান শেষে অন্যত্র চলে যান। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

এদিকে, বিশাল হাসপাতাল ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি করা হলেও যন্ত্রপাতি ও প্রশাসনিক জঠিলতার কারণে দীর্ঘদিনেও কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু হয়নি। ফলে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পাস করা চিকিৎসকরা ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ করছেন।

ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানান, ইন্টার্নশিপ নিয়ে চরম বিপাকে আছেন তারা। আধুনিক যন্ত্রপাতি, প্যাথলজি, রেডিওলজিসহ উচ্চতর ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির মধ্যে তাদের ইন্টার্নশিপ করতে হচ্ছে। তারা শিগগিরই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, অধ্যক্ষ রুহুল আমীন খানকে কলেজে পাওয়া যায়নি। ৬৮ জন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও চিকিৎসকের মধ্যে ৫৬ জন অনুপস্থিত। নিয়ম অনুযায়ী তারা পাঠদানের পর ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত থাকবেন। কিন্তু সপ্তাহে একদিন, বড় জোর দুই দিন এক-দুই ঘণ্টা ক্লাস নিয়ে চলে যান তারা।

অনুপস্থিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের অধিকাংশের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ ফোন ধরেননি। তাদের মধ্যে কার্ডিওলজির চিকিৎসক এ কে এম সাজিদুর রহমান সিদ্দিক মোবাইল ফোনে জানান, তিনি ক্লাস করে চলে যান ঢাকায়। হাসপাতাল চালু নেই। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে যন্ত্রপাতি নেই। তাই তিনি অনুপস্থিত থাকেন। অর্থোপেডিকের প্রধান ডা. দীপংকর লোদ অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি এসে কথা বলব। ডা. আবদুল্লাহ আল মারুফ একই কথা বলেন। মেডিসিনের আবদুস সাত্তার সরকার বলেন, আমি বদলি হওয়ার চেষ্টা করছি। পরিবার ঢাকায় থাকে। তাই উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না।

জেলা বিএমএ সভাপতি মাহবুব ইকবাল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তিন দিন কিশোরগঞ্জ অবস্থান করে গেছেন। তার সব অনুষ্ঠানে সরকারি সব বিভাগ ও দফতরের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। শুধু ছিলেন না মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। তার অবহেলার কারণে আজও হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি।’ বিএমএর সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব বাদলও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, ২০১২-১৩ অর্থবছরে কিশোরগঞ্জে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ওই বছরই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close