মো. রাজু খান, ঝালকাঠি

  ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

ঝালকাঠিতে ভাসমান সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

ভাসমান কচুরিপানা পানিতে ভেসে থাকে প্রায় বছরব্যাপী। এ জঞ্জাল কচুরিপানাকে ধাপে ধাপে কাজে লাগাতে কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে পরিকল্পনা করে কৃষকরা। তারপর সেসব ধাপের ওপর টেপাপানা দিয়ে তৈরি করে শাক-সবজির ভাসমান বীজতলা। এভাবে ভাসমান ধাপের ওপরে বীজতলা করে ঝালকাঠির কৃষকরা। পরে তাতে সবজির বীজ থেকে চারা ফুটিয়ে এখন শাক-সবজির ক্ষেতে পরিণত হয়েছে।

জেলায় কৃষি বিভাগের কর্মসূচীর আলোকে ভাসমান শাক-সবজি ক্ষেত রয়েছে ৬০টি, প্রকল্পভিত্তিক রয়েছে ২০ টি ও উদ্ভুদ্ধকরণ রয়েছে ৪টি বীজ তলা। জেলায় মোট ৮৪টি বীজ তলার মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ জন কৃষকের ১৮টি, নলছিটিতে ১২ জন কৃষকের ৪২টি, রাজাপুরে ৩ জন কৃষকের ১২টি এবং কাঠালিয়ায় ৩জন কৃষকের ১২টি আমন বীজতলা রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জালাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, কচুরিপানা দিয়ে স্তুূপ তৈরী করে ১ মিটার পুরু, ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও সোয়া মিটার প্রস্থ করে ধাপ তৈরী করে কৃষকরা। কৃষকের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী কোনোটায় পেঁপে, লাউ, কুমড়া, শিম, বরবটি আবার অন্যগুলো টমেটো, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সবুজ ফুলকপি, শসার চারা উৎপাদন এবং লাউশাক, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক বা সাদা শাক চাষ করছে।

জেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিকা বিশ্বাস জানান, বন্যা এলাকার কৃষকেরা যেন রোপা আমনের চাষ করতে পারে, এ জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চারা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্যা ও বৃষ্টির জন্য যেসব এলাকার বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সেসব জায়গায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নিজেদের উদ্যোগে কলাগাছের ভেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছে।

ইতোমধ্যেই জেলার চার উপজেলায় ৮৪টি স্থানে ভাসমান সবজি ক্ষেত থেকে সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।

রাজাপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবছরই বন্যা, অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। তাই যথাসময়ে ফসল উৎপাদনে বিলম্ব হচ্ছে। একই সঙ্গে ফসলের ঘাটতি হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা তৈরী করতে গতবছরই কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। অতিবৃষ্টির কারণে বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলার ৮৪ টি স্থানে ভাসমান বীজতলা তৈরী করা হয়েছে।

রাজাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোজিৎ কুমার মিত্র জানান, একেকটি ভাসমান বীজতলায় এক কেজি অঙ্কুরিত বীজ ছিটানো হয়েছে। তাতে যে চারা জন্মেছে, তা এক বিঘা জমিতে রোপণ করা সম্ভব। পানির ওপর ভাসমান থাকার কারণে এরূপ বীজতলায় পানি সেচের দরকার হয় না। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে বীজতলা তৈরির মৌসুম শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে রোপা আমনের চারা রোপণ করা যায়।

নলছিটি উপজেলার প্রতাপ গ্রামের কৃষক আ. লতিফ জানান, নিচু এলাকায় পানি নামার পর যাতে দ্রুত চারা রোপণ করা সম্ভব হয়, সে জন্য ভাসমান বীজতলা তৈরির পরিকল্পনা নেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘সাত বিঘায় বোরো করছিলাম। সব পানিতে খাইয়া হালাইছে। ক্ষতির শেষ নাই। অ্যাহন আকাশে মেঘ দেখলে ডর লাগে। এরপরও ভেলায় আমনোর বীজতলা হরছি। হেই বীজ তলায়ই আবার শীতকালীন সবজি রোপণ করেছি। এখন সেখানে অনেক পরিমাণ শাক-সবজি উৎপাদন হয়েছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শেখ মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা তৈরীর পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে জৈবিক প্রক্রিয়ায় বীজতলা তৈরী করে সময়োপযোগী বীজ, চারা ও শাক-সবজি উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close