কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

দুর্গাপূজা উপলক্ষে কটিয়াদীতে দেশের সর্ববৃহৎ ঢাকঢোলের হাট

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এবারও বসেছে দেশের সবচেয়ে বড় ঢাকঢোলের হাট। এ হাট বসেছে দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলা সদরের পুরাতন বাজার প্রেস ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় সংলগ্ন ঢাকের হাটের শেডে। প্রতি বছরের মতো এবারও ২ দিনব্যাপী ৫০০ বছরের এ ঐতিহ্যবাহী বিরাট ঢাকের হাট শুরু হয়েছে। চলবে শনি ও রোববার।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। পূজার সকল আয়োজন প্রায় শেষ। এখন শুধু ঢোলের বাজনা আর সানাইয়ের সুরের অপেক্ষা। লগ্ন শুরু হতে আর মাত্র দুই দিন। এরই মধ্যে ঢাক ঢোল, সানাই, বাঁশি নিয়ে হাটে দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে ঢাকিরা। দীর্ঘদিনের এই ঐতিহ্যবাহী হাট সম্পর্কে দেশের প্রায় সর্বত্রই সুনাম রয়েছে। পূজার আয়োজকরা ভাল মানের বাদক নিতে ছুটে আসেন এই হাটে।

জনশ্রুতিতে আছে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সর্বপ্রথম তাঁর প্রাসাদে দূর্গাপুজার আয়োজন শুরু করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে ভোগবেতাল গ্রামে ছিল রাজপ্রাসাদ। পুজা উপলক্ষে সুদুর বিক্রমপুর (মুন্সিগঞ্জ) পরগনার বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হতো ঢাক, ঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য। সে সময় নৌপথে যন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলো সড়কের পাশে পুরোনো ব্রক্ষপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দুই দিন আগে এসে পৌঁছাতেন। পরবর্তী সময়ে মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পুজা শুরু হয়। সেই সঙ্গে চলে পূজায় বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। দিন দিন পূজারী ও আয়োজকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে আয়োজকদের মাঝে বিরোধ আর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে অবশেষে যাত্রাঘাট থেকে স্থান পরিবর্তন হয়ে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরাতন বাজার এলাকায় এই হাট চলতে থাকে। সেই থেকে আজ অবধি এই হাটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজিপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক দূর্গাপূজার আয়োজক ও বাদ্যিযন্ত্রিদের আগমন ঘটে। নাচসহ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে বাদ্যযন্ত্রীরা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকে। সাধারণত একটি ঢাক ১০ থেকে ১২ হাজার, ঢোল ৭-৮ হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে ৫-৭ হাজার, ‘ব্যান্ডপার্টি’ ছোট ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং বড় ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজামন্ডপে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ঠ করে থাকেন। বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরণের ঢাকের হাট নেই।

ইউএনও বেগম ইসরাত জাহান কেয়া ও ওসি জাকির রব্বানী জনান, ঢাকীদের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব আইন উদ্দিন বলেন, ‘৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। উপজেলা প্রশাসন আগত বাদ্যযন্ত্রীদের প্রয়োজনীয় নিরাপওা দিয়ে থাকে।’

কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘কটিয়াদী পুরাতন বাজারে ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাটের জন্য ৮লাখ টাকা ব্যয়ে একটি শেড নির্মানের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। অচিরেই শেড নির্মান সম্পন্ন হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close