মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ০৮ অক্টোবর, ২০১৮

মির্জাগঞ্জের বিদ্যালয়ের মাঠে প্রধান শিক্ষকের ধান চাষ!

* খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা * বিদ্যালয়ে চলাচল ও পাঠদান ব্যাহত

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মকুমা সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আউশ-আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। আর এ ধান চাষ করছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম মৃধা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম।

শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, শরীর চর্চা ও বিনোদনের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ের মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক থাকলেও এখানে তা ব্যতিক্রম। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত লাভের আশায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মাঠে ধান আবাদসহ রবিশস্য চাষ করছেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত মকুমা গ্রামে ১৯৮৫ সালে ৫০ শতক জমির ওপর মকুমা সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যালয়টির জন্মলগ্ন থেকে মাঠে ধান চাষ করছেন প্রধান শিক্ষকের বাবা ও জমিদাতারা। স্কুলের সামনে একটু ফাঁকা জমি রেখে বাকি জমির দক্ষিণ পাশে কেবল আমন ধানের সবুজের সমরাহ। বর্তমানে ১০ শতকের ওপরে বিদ্যালয়টি থাকলেও বাকি জমিতে চলছে ধান চাষ। বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক এবং সব মিলিয়ে ৪৮ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণিতে দুজন করে চারজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল এবং তৃতীয় শ্রেণিতে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় ছয়জন থাকলেও একজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল না।

বিদ্যালয়টি দক্ষিণমুখী হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুল সময়ে মুক্ত আবহাওয়া প্রাপ্তি, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, ক্রীড়া-বিনোদনের জন্য বিশাল মাঠ থাকলেও বর্তমানে আমন ধানের মাঠ ভরপুর। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গেলে এবং কোনো জাতীয় অনুষ্ঠান হলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের অনুষ্ঠান বিদ্যালয়ের বারান্দায় দায়সারাভাবে সেরে নেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, তারা বিগত দিনগুলোয় মাঠে খেলাধুলা করতে পারেনি এবং বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা কোনো ধরনের খেলাধুলা করতে পারে না। এ বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস না নেওয়ার ফলে পাশের বিদ্যালয়গুলোয় গিয়ে ভর্তি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের পাশে একটি টিনের ঘর ছিল, তা আজ আর নেই। এসব অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে। এতে শিক্ষকদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘বিদ্যালয় ভবন ছাড়া অন্য জমিতে ধান চাষ করা হচ্ছে। চাষকৃত লাভের টাকা দিয়ে মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিল মেরামতসহ নতুন মালামাল কেনা হয়। এত জমি বিদ্যালয়ের কোনো কাজে আসে না। তাই মাঠে ধান চাষ করছি।’ শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পাশে একাধিক স্কুল থাকা এবং বিদ্যালয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা নাজুক থাকায়, শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা কম।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম কুমার কু-ু বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠে ধান চাষ করা হচ্ছে, এটা আমার জানা ছিল না। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close