কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো শারফুদ্দীন কাশ্মীর, মিরসরাই

  ০৪ অক্টোবর, ২০১৮

মিরসরাইয়ে ডজনখানি প্রার্থী

আ.লীগে স্বস্তি, কোন্দলে বিএনপি

চট্টগ্রাম-১ আসন মিরসরাইয়ের রাজনীতি ঘনীভূত হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) কেন্দ্র করে। প্রায় ৩০ হাজার একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামীতে যিনি সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হবেন, তার হাতেই উঠবে এ অঞ্চলের কর্তৃত্বের ভার। তাই নির্বাচন সামনে রেখে দুই বড় দুই জোটই জয়ের ছক কষছে।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এ আসনে যথারীতি শক্তিশালী প্রার্থী। দলীয় কোন্দল এড়াতে এর আগে খোদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একবার এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই আ.লীগ প্রার্থীকে হারাতে বিএনপির একটি অংশ খালেদা জিয়াকেই চাইছেন।

অবশ্য আসনটি ঘিরে দুইদলের মাঝে রয়েছে কোন্দল। আ.লীগ ও বিএনপি দুই দলেই রয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। নির্বাচন যত সামনে আসছে কোন্দল ততই স্পষ্ট হচ্ছে। তবে দলীয় কোন্দল নিয়ন্ত্রণ করে এ আসনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। অন্যদিকে বিএনপির টার্গেট হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করা। সে লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বড় দুই দলের এক ডজন প্রার্থী।

আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য পদে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান এমপি এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোশাররফপুত্র ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ.লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রুহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন এবং বড়তাকিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরুণ শিল্পপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে তারা সবাই এলাকায় জনসংযোগসহ নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। এ ছাড়া মহাজোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়–য়াও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এ দিকে এমপি মোশাররফ হোসেনের হাত ধরেই মিরসরাইয়ে শুরু হয়েছে উন্নয়ন যজ্ঞ ‘ইকনোমিক জোন’ নির্মাণের কাজ। স্বাধীনতার পর এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আওয়ামী লীগের ‘মুরুব্বি’ মোশাররফ হোসেন থাকছেন দলের ‘অটো চয়েজ’। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন অংশ না নিয়ে তার ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলকে প্রার্থী করতে পারেন-এমন আলোচনাও দলের মধ্যে আছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন ও উত্তর জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি ওয়ান-ইলেভেনের সময় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপি জামায়াতের পেট্রোলবোমাসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধ করেছি। এখনো এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে আছি। দল যদি চায় আমি নির্বাচন করবো। এ সময় ‘দল মনোনয়ন যাকেই দিক, তার সঙ্গে কাজ করবো’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ.লীগের সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় সংগঠন। যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। আগামী নির্বাচনে মোশাররফ হোসেন মিরসরাই থেকে আবার দলের মনোনয়ন পাবেন বলে এখন পর্যন্ত জানি আমরা।

অন্যদিকে মিরসরাইয়ে বিএনপির রাজনীতি কয়েকটি ধারায় বিভক্ত। দলীয় বিভেদ দূর করতে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া নিজেই এই আসনে প্রার্থী হন। পরে উপনির্বাচনে জয়ী হন এম এ জিন্নাহ। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। পরে তিনি বিএনপি ছেড়ে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দেন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী এম ডি এম কামালউদ্দিন চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন পান। নির্বাচনে তিনি হেরে যান। আগামী নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি থেকে বেশ কয়েককজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ক্লিফটন গ্রুপের এমডি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন চৌধুরী, বড়তাকিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ইউছুপ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমীনের নাম শোনা যাচ্ছে। দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে তারা অংশ নিচ্ছেন। তবে দলের মধ্যে একটি অংশ চাইছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যদি এ আসনে প্রার্থী হন তাহলে বিপুল ভোট বিএনপি জয়লাভ করবে।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মনিরুল ইসলাম ইউছুপ বলেন, দলের জন্য কাজ করছি। বলতে পারেন পরীক্ষা দিচ্ছি। বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান যদি মনোনয়ন দেন দলকে বিজয়ের ধারায় ফিরিয়ে আনবো। যাকে মনোনয়ন দিক তার জন্য কাজ করতে আমি প্রস্তুত। আরেক মনোনয় প্রত্যাশি কামাল উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টার পর জানা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বিশ্রামে আছে। তবে তার অনুসারীরা মাঠে সরব রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ দিকে মিরসরাইয়ে দলীয় কোন্দল এমনই তীব্র যে শিল্পপতি কামালের ইফতার মাহফিলও দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় পন্ড হয়েছিল বিগত দিনে। সে হিসেবে এবারও হয়তো কোন্দল ঠেকাতে আগের মতো বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। যদি এমন হয় নৌকা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, ধানের শীষ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ভোটারদের দ্বারে গেছেন, তখন কী হবে? এই নিয়ে স্থানীদের মধ্যে বিরাজ করছে নানা সমিকরণ। মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমীন বলেন, কে মনোনয়ন পাবেন তা ঠিক করবে দলীয় হাই কমান্ড। এখনো বিএনপির প্রার্থী নির্ধারণ হয়নি।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভীড়ে বসে নেই বাম নেতা দিলীপ বড়–য়াও। তিনি মহাজোট সরকারের আমলে একবার শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। সে সুবাদে তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশি বলে জানা গেছে। মাঝে মাঝে এলাকায়ও যাচ্ছেন। তবে তার পক্ষ থেকে জোরালো তেমন ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মিরসরাই আসনটি মূলত দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারনে সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তাই এবারের নির্বাচনে যে কোন মূল্যে আসনটি পেতে মরিয়া হয়ে উঠবে দুইদল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close