মনির হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর

সরকারি হাসপাতালে ক্লিনিকের দালালদের দৌরাত্ম্য

ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়োগকৃত দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরা। জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের ভরসাস্থল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতাল যেন দালালদের আখড়া। ফলে সরকারি এ হাসপাতাল থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে হাসপাতালে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর দালালদের পৃষ্ঠপোষকতার কথা। গত কয়েক বছরে জেলা শহরের কুমারশীল মোড়, সদর হাসপাতাল রোড ও জেল রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শত বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এসব ক্লিনিকের দালালদের প্ররোচনায় নিঃস্ব হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা।

অভিযোগ আছে, দালালরা সদর হাসপাতালে অবস্থানকালীন নিজেদের হাসপাতালের স্টাফ পরিচয়ও দিয়ে থাকেন। ফলে বিভ্রান্ত হন সাধারণ রোগী ও স্বজনরা। হাসপাতাল কর্মচারীদের সঙ্গে দালালদের সখ্যের কারণেই তারা বেশি সুযোগ পায়।

পৌর শহরের কুমারশীল মোড় এলাকায় ১৯৯২ সালে ১ একর ৭০ শতাংশ জমরি ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় জেলা সদর হাসপাতাল। পরে ১৯৯৫ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০১০ সালের ১২ মে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে আধুনিক এ হাসপাতালের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালটিতে জরুরি বিভাগ ছাড়াও অর্থোপেডিকস ওয়ার্ড, গাইনি ও প্রসূতি, শিশু, মেডিসিন, সার্জারি, ডায়রিয়া ও পেয়িং ওয়ার্ড, কার্ডিওলজি ওয়ার্ড এবং চক্ষু ওয়ার্ড ও বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগসহ সার্জিকেল অস্ত্রোপচার কক্ষ রয়েছে। তবে এত কিছু থাকার পরও দালালদের কারণে এ হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।

সদর হাসপাতাল ঘিরে দুই ডজনেরও বেশি দালাল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। দালাল চক্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্মচারী ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা জানান, সদর হাসপাতালের আশপাশে অবস্থিত বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে কমিশনভিত্তিক কাজ করা এসব দালালরা উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে রোগীদের ভর্তি ফি এমনকি রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফি থেকেও কমিশন পেয়ে থাকেন দালালরা।

অভিযোগ রয়েছে, সদর হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসক হাসপাতালে ঠিকমতো না বসে বেসরকারি ক্লিনিকে বসে রোগী দেখেন। সদর হাসপাতালে যেসব চিকিৎসক বিনামূল্যে রোগী দেখার কথা বেসরকারি ক্লিনিকে সেসব চিকিৎসকই রোগীদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত ভিজিট নিচ্ছেন। জেলা সদর হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসকই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার সময় বেসরকারি ক্লিনিকে বসে রোগী দেখেন। এছাড়া দুপুর ১টার পর কোনো চিকিৎসকেরই দেখা মেলে না সদর হাসপাতালে। দালালদের দৌরাত্ম্য আর চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে।

জানতে চাইলে আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন বলেন, হাসপাতালের দালাল চক্র রোগীদের পাশাপাশি আমাদের জন্যও বিব্রতকর। প্রতিনিয়ত তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছি। প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দালালদের সাজা দেয়া হয়। সাজা ভোগ করে আবার তারা দালালিতে যুক্ত হয়। হাসপাতালের আশপাশের ক্লিনিকগুলো দালালদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলেই এটি রোধ করা যাচ্ছে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, এই দালাল চক্রের সঙ্গে কিছু বেসরকারি ক্লিনিক ও অসাধু চিকিৎসক জড়িত। সদর থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দালাল চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close