রবিউল আলম ইভান, কুষ্টিয়া

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

‘ত্রুটিপূর্ণ’ ডিজাইনের সেতু ভাঙনের মুখে জনপদ

কুষ্টিয়ায় স্থানীয় সরকারের প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রশি টানাটানিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নদী। জেলার গড়াই নদীর উপর সদ্য নির্মিত সেতুটি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এই অবস্থা হয়েছে। এছাড়া সেতুর কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে স্থানীয় জনপদ।

এদিকে স্থানীয় অবকাঠামো, জনপদ, জমি ও সেতুর রক্ষার দাবিতে গতকাল সোমবার মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী সহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা। সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির উদ্যেগে সেতু সংলগ্ন নদী ভাঙ্গন আক্রান্ত পাড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান এম সম্পা মাহমুদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিটির সদস্য সচিব হাসান আলী।

নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অসম্পূর্ণ ডিজাইনে কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ করেছে। এর ফলেই নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সূচনা হয়ে গোটা জনপদকে বিলুপ্তির হুমকিতে ফেলেছে। কিন্তু এর সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বা এলজিইডি কোনো দায় না নেওয়ায় সেতুটি ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ নির্মাণ করে এলজিইডি বিভাগ। সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লি. ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর কার্যাদেশ পাওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেতুর কাজ সমাপ্তির কথা থাকলেও ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ সেতু হস্তান্তর করে তারা। ওই দিন সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, জেলা কুষ্টিয়া শহরের অদূরে নির্মিত শেখ রাসেল সেতুটির ডিজাইন ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হওয়ায় গড়াইর উজান থেকে পার ভেঙ্গে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটেছে। বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের বরাত দিয়ে বক্তারা জানান, অসম্পূর্ণ ডিজাইনে নির্মিত হওয়ায় নদীর বাম তীর ভেঙ্গে সেতুর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ২ ওয়ার্ডের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসতভিটাসহ অবকাঠামো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সড়ক ও জনপথ (সওজ), এলজিইডি, পাউবোসহ সরকারের প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত প্রকৌশলীগণর উল্লেখ করেছেন, বিধি মোতাবেক কোন সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডিজাইনের সাথে অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতি ১ মিটার সেতু দৈর্ঘের সাথে অনুপাতিক হারে (১/১.৫ মিটার) উজানে এবং ভাটিতে (১/০.৫মিটার) দৈর্ঘের গাইড বাঁধ সংযোজনসহ ডিজাইন চুড়ান্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্ত শেখ রাসেল সেতু নির্মাণে সেই নিয়ম প্রতিপালিত না হওয়ায় পাড় ভেঙ্গে নদীর গতিপথ পরিবর্তণের যে সূত্রপাত হয়েছে তাতে খুব শীঘ্রই সেতুর উজানের জনপদ নদীর গর্ভে বিলিনসহ রাস্তাঘাট নদীতে তলিয়ে যাবে।

এদিকে গত সতের দিনে নদী ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ হুমকিতে থাকা এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিগণ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে জেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়ে দেন, ‘নদীর পাড় ভেঙ্গে সেতু ঝুঁকিতে পড়লেও এলজিইডির কিছুই করার নেই।’

তবে নদী ভাঙনের সম্ভাব্য হুমকির কথা জানিয়ে গতবছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি জেলা এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে প্রেরিত এক পত্রে পাউবো কর্তৃপক্ষকে নদীর উজান এবং ভাটিতে দুইপাশে মোট ২ কিলোমিটা পাড় রক্ষা বাঁধ নির্মানের অনুরোধ করে। কিন্তু জেলা পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানিয়ে দেন, গড়াই নদীর বাম তীরে ভাঙ্গন আক্রান্ত, তবে ওই জোনের সেতু রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নয়; সেতু রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এলজিইডি বিভাগের।

সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ দুটি নদী ভাঙনের দায় এড়াতে পারে না উল্লেখ করে বক্তরা বলেন, ভাঙন আক্রান্ত এলাকা পাউবোর গড়াই পূনরুদ্ধার প্রকল্পভুক্ত জোনের অন্তর্ভূক্ত। অপর দিকে সেতুটি নির্মিত হয়েছে এলজিইডি বিভাগের অধিনে। এ সময় তারা প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল সেতুটি রক্ষাসহ অস্তিত্বের বিপন্নের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ইউনিয়ন রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা জন্য আহ্বান জানান।

স্থানীয়দের মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুব আলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লালিম হক, জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায়, হাটশ পরিপুর ইউপি আ.লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, স্থানীয় জামে মসজিদের সভাপতি জালাল উদ্দিন সেখ প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close