কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ায় বীজ ধান বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলার প্রায় ২০০ কৃষক বীজ ধান বিক্রেতাদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ফলে চলতি মৌসুমে আমন চাষের সুফলসহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। মৌসুমের শেষ সময়ে বীজ ধান বিক্রেতাদের এমন প্রতারণায় প্রায় কয়েক হাজার একর জমিতে আমনের ফসল না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি না থাকায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের এ সর্বনাশ ঘটিয়েছে বলে দাবি কৃষকদের।

চলতি আমন মৌসুমে বীজ ধানের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, বিএডিসির সঠিক বীজ না দিয়ে বোর মৌসুমের স্থানীয় নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করেছে। এতে প্রায় এ অঞ্চলের ২০০ কৃষকের সর্বনাশ করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। বিএডিসির পুরনো ব্যাগে, ধানের জাত পরিবর্তন করে, মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব বীজ প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিক্রি করেছে অননুমোদিত খুচরা ব্যবসায়ীরা। সাধারণ কৃষকরা না বুঝেই এসব ধানের বীজ চাষ করে পড়েছেন বিপাকে। অপরিপক্ক অবস্থায় ফলন হয়ে পড়েছে এসব বীজে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছু কৃষক ধার-দেনা করে পুনরায় চাষ শুরু করছেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের সরবরাহ করা বীজের প্যাকেটের গায়ে কাটাছেড়া করে ব্রি-৪৯ লেখা ছিল। কিন্তু ভেতরে ছিল ২ ধরনের বীজ। একটি ছিল ব্রি-২৮ এবং অন্যটি ছিল ব্রি-২৮ ও ব্রি-৪৯ মিক্সড। এসব বীজে খুব দ্রুত ফুল আসে। আমন মৌসুমের ফসল না হওয়ায় ২৫ ভাগ ফলন পেতে পারে কৃষক। আবার পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বড়বাইশদিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মনিপাড়ার সাইদুল ফরাজী, তুহিন তালুকদার, ছাতিয়াপাড়ার দুদা, নজরুল শিকদার এবং গাইয়াপাড়ার আলাউদ্দিন গাজী জানান, উপজেলার তক্তাবুনিয়া বাজারের বীজ বিক্রেতা সজীবের কাছ থেকে আমরা বীজ ক্রয় করেছি। এমনিভাবে কলাপাড়ার মহিপুর, লতাচাপলী ও নীলগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ১৫০ কৃষকের প্রায় দুই হাজার একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষকরা আরো জানায়, বিএডিসির বস্তায় এসব বীজ তাদের সরবরাহ করা হয়েছে। প্যাকেটে ধানের জাতের নাম এবং মেয়াদ কাটা ছেড়া করে লেখা ছিল।

কৃষক লুৎফর জানান, বীজ বিক্রেতা সজীবের কোনো লাইসেন্স নেই। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ব্যবসায় করে যাচ্ছেন।

কৃষক ফারুক মিয়া জানান, এত সব ঘটনার পরেও স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাফরের দেখা মেলেনি। এলাকায় ঠিকমতো না আসার কারণে অনেক কৃষকের কাছেই তিনি অচেনা। এসব বীজ বিক্রেতাদের শাস্তিসহ ক্ষতিপূরণের দাবিতে ক্ষুব্ধ কৃষকরা মানববন্ধন করেছে তক্তাবুনিয়া বাজারে। এদিকে, রোশানল থেকে রেহাইসহ আইনি ঝামেলা এড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ম্যানেজে মাঠে নেমেছে বীজ বিক্রেতা সজীব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়বাইশদিয়া ইউয়িনের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাফর বলেন, কৃষক যদি বীজ বপন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার দায় তাদের নয়। এ বিষয়ে তক্তাবুনিয়া বাজারের বীজ বিক্রেতা সজীব জানায়, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বিএডিসির ডিলার আবু মিয়া বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের এসব বীজ সরবরাহ করেছেন। তিনি কলাপাড়ার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এসব বীজ সংগ্রহ করে বিক্রি করেছেন। তবে কলাপাড়ার সেই বিক্রেতার নাম বলতে রাজি হয়নি সজীব। কলাপাড়া ও রাংগাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল মন্নান জানান, এসব বীজ সরবরাহকারী মূল প্রতারক বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বিএডিসির ডিলার আবু মিয়ার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দেওয়া হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব কৃষককে রবি মৌসুমে প্রদর্শনী প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close