কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি, স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

২৫-৩০ জন ডাক্তার আছেন কিন্তু কাউকেই পাওয়া যায় না

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। দিনের পর দিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কর্মরত চিকিৎসকরা অনুপস্থিত থাকায় কমে গেছে রোগীর সংখ্যা। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় উপজেলার একমাত্র এ হাসপাতালবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও সেবিকারা মিলে কোনো রকমে চালাচ্ছেন হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম। একেবারে নিরুপায় হয়ে যে কজন রোগী হাসপাতালটিতে সেবা নিতে যায়, তাদের অধিকাংশ রোগীকেই আবার রেফার্ড করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজসহ অন্য হাসপাতালে। এ ছাড়া হাসপাতালের নিরাপত্তাব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। হাসপাতালে রোগীদের অবস্থান করার মতো পরিবেশও নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

গত শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাসপাতালটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগী আছে মাত্র পাঁচজন। রোগীর বেডে ঘুমাচ্ছে বেড়াল। বেডগুলো এলোমেলো। বেডে বিছানো কাপড়গুলো অপরিষ্কার। ময়লা ও রক্তমাখা। হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কোনো ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি। তবে ঘণ্টাখানেক পর জরুরি বিভাগে ডা. আলী মোহাম্মদ হোসাইন নামে একজন মেডিকেল অফিসারকে দেখা যায়। এ সময় কথা হয় হাসপাতালে ভর্তি ৫ রোগীর সঙ্গেও।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়া জানান, অ্যাজমা রোগের চিকিৎসা নিতে বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালে আছি। হাসপাতালের পরিবেশটা একদম ভালো না। খাবারের মানও খারাপ। বিশেষ করে রাতে কুকুর-বেড়ালের জন্য ঘুমানোই যায় না। একই রকম অভিযোগ করে হাসপাতালে ভর্তি অন্য ৪ রোগী আদমপুর গ্রামের সাবেক পৌর কাউন্সিলর অঞ্জন সরকার, একই গ্রামের মালেকা আক্তার ও দুঃখিয়ারগাতী গ্রামের ঝুটন মিয়া, চারিতলা গ্রামের কামরুন্নাহার।

হাসপাতালে দায়িত্বরত সেবিকা জাকিয়া আক্তার ও রিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আমরা যতক্ষণ দায়িত্বে থাকি, তখন কুকুর-বেড়াল প্রবেশ করলে তাড়িয়ে দিই। তবু সুযোগ পেলেই কুকুর-বেড়াল ঢুকে পড়ে। হাসপাতালে নিরাপত্তা প্রহরী, আয়া ও ওয়ার্ডবয় না থাকায় এসব সমস্যা বেশি হচ্ছে বলেও জানান তারা।

তা ছাড়া হাসপাতালে যারা খাবার পরিবেশন করেন, তারা নিয়ম মেনে রোগীদের খাবার দেন না এবং সপ্তাহে ২-৩ দিন কাপড় ধোলাইয়ের নিয়ম থাকলেও যারা কাপড় ধোলাইয়ের দায়িত্বে আছেন তারা পনেরো দিনেও একবার কাপড় ধোলাই করেন না। রোগীদের জন্য বিছানার চাদরগুলো ময়লা মাখা থাকে বলে জানা যায়।

হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা আবদুর রশিদ, আবদুল জাহেদ ও সুকুমার সূত্রধর জানান, হাসপাতালটিতে ২৫-৩০ জন ডাক্তার আছেন। কিন্তু একজনও হাসপাতালে আসেন না। ডাক্তার না থাকায় সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে একজন বিশেষজ্ঞ দাঁতের ডাক্তার থাকলেও রোগীরা সারা বছরেও তার দেখা পান না বলে অভিযোগ করেন তারা।

হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিন্নাত সাবাহ্র সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, খাবার পরিবেশ এবং কাপড় ধোলাইয়ের কাজটি যারা করেন, তারা স্থানীয় লোক। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় অন্য বিষয়ে জানতে চাওয়ার আগেই তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ বিষয়ে নেত্রকোনার সিভিল সার্জন ডা. তাজুল ইসলাম খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close