আবদুর রহমান রাসেল, রংপুর ব্যুরো

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ফিটনেসহীন যানবাহন কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ

মহাসড়কে ইজিবাইকের উৎপাত

রংপুর অঞ্চলে ফিটনেসহীন ও রেজিস্ট্রেশনহীন যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ফিটনেস না থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে পুরোদমে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করছে এসব যান। এতে সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। আর প্রাণ হারাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন।

সম্প্রতি রংপুর অঞ্চলে কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। রংপুর অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনার জন্য তিনটি বিষয়কে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ফিটনেসহীন যান, অদক্ষ চালক ও ধীরগতির যানবাহনের কারণে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুর থেকে বিভিন্ন আন্তঃজেলা ও আন্তঃউপজেলাগামী অধিকাংশ বাসের ফিটনেস নেই। আর এসব বাসের চালকরাও তেমন দক্ষ নন। বেশি পুরনো হওয়ায় অদক্ষ চালকদের হাতেই বাসগুলো তুলে দিচ্ছেন মালিকরা। একদিকে ফিটনেসহীন, অন্যদিকে অদক্ষ চালকের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছে এসব বাস। এর ওপর ধীরগতির তিন চাকার পরিবহন বিশেষত ইজিবাইকের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ইজিবাইকগুলো রাস্তার যেখানে সেখানে পার্কিং করছে চালকরা। যাত্রী দেখলেই কোনো ধরনের সিগন্যাল ছাড়াই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এগুলো। বর্তমানে শুধুমাত্র রংপুর সিটি এলাকাতেই চলছে ৩০ হাজারের বেশি ইজিবাইক। এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র সাড়ে ৩ হাজারের। আর ইজিবাইক চালকদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ বা ড্রাইভিং লাইসেন্স। বিশাল সংখ্যক ইজিবাইক চলাচলে নেই নির্ধারিত স্ট্যান্ড। তাই ট্রাফিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে সব সড়ককেই স্ট্যান্ড ভেবে যাত্রী পরিবহন করছে ইজিবাইকগুলো। গত ২ সেপ্টেম্বর রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকায় দুইটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী বিআরটিসির একটি বাস সিও বাজার এলাকায় পৌঁছালে একটি ইজিবাইককে সাইড দিতে গিয়ে বিপরীতমুখী দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা অপর একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে দুইটি বাসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর ফিটনেস ছিল না। আর প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, এ দূর্ঘটনার জন্য দায়ী অজ্ঞাত ওই ইজিবাইক। যদিও ওই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বাস দুইটির দ্রুতগতিকে চিহ্নিত করেছে এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। এ দুর্ঘটনার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর নগরীর সড়ক-মহাসড়কগুলোতে অবৈধভাবে চলা ধীরগতির যানবাহন রোধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ওই দিন নগরীর মেডিকেল মোড় থেকে সিও বাজার ও মর্ডান মোড় থেকে দমদমা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মোট ১৯টি ইজিবাইক আটক করা হয়। এরপর আর দীর্ঘ হয়নি পুলিশের এ অভিযান।

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, সড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ইজিবাইক। এসব পরিবহন যত্রতত্র পার্কিং করে যাত্রী উঠানামা করে। অনেক সময় বড় গাড়িকে সাইড দিতে পারে না। এতে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়।

জানতে চাইলে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির (ভারপ্রাপ্ত) সম্পাদক আজিজুল ইসলাম রাজু বলেন, মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ না করলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে না। ইজিবাইক সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিবহনের চালকরা দক্ষ নন। তারা যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানামা করে। আর দ্রুতগামী পরিবহনের চাহিদা মত সাইড দিতে না পারায় দুর্ঘটনা লেগে থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close