মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বুড়িচংয়ে শীতকালীন কপি চারা উৎপাদনে ব্যস্ত কৃষক

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেষপুর গ্রামে কৃষকরা কপি চারা উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছর কৃষকরা উৎপাদন করছে লাখ লাখ কপি চারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা এ উপজেলায় কপি চারা কিনতে এসেছেন। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে উৎপাদন করে বাণিজ্যিক মূল্য ভালো হওয়ায় খুশি কৃষক।

সরেজমিনে উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের সমেষপুর গ্রাম ঘুরে স্থানীয় একাধিক কৃষকের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এখানে চারা উৎপাদন হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছরই ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে চারা উৎপাদন। সমেষপুর গ্রামের চাষি আবুল হাশেম জানান, কপি চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমেই জমি বীজ বপনের উপযুক্ত করে তুলতে হয়। এ ক্ষেত্রে লম্বায় ১২ এবং প্রস্থে আড়াই হাত সাইজের জমি তৈরি করতে হয়। এটাকে বীট বলা হয়। প্রতিটি বীটে বীজ বপনের ২০-২২ দিনে চারা উৎপাদনের উপযুক্ত হয়ে উঠে।

অনেক কৃষক জমির পাশে ঘর বানিয়ে রাত যাপন করেন। সারাদিন জমির চারা পরিচর্যাসহ বিক্রিতে সময় কাটে। কপি চারা বিক্রেতা কাসেম জানান, আগস্টের মাঝামাঝি জমি তৈরি করে বীজ লাগানো শুরু হয়। চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনীসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে অনেকে এখানে এসে চারা কিনছে।

এ উপজেলার বাসিন্দা উনবিংশ শতাব্দির পঞ্চাশ দশকে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় ও ঢাকা মোহামেডান ফুটবল দলের কৃতি খেলোয়াড় ময়নামতির হুমায়ুন কবীর (৮৫) জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু আগে থেকে এখানকার চাষিদের বিভিন্ন সবজি চারা উৎপাদন করতে দেখেছি। মোতাহের নামের এক চাষি জানান, বর্তমানে প্রতি হাজার চারা এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্রেতাদের সমাগম যত বাড়তে থাকে দামও তখন বেশি হবে।

চাষিরা আরো জানান, এখানকার কৃষকরা হাইব্রিড জাতের বীজের চারা বিক্রি করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সিলভার কাপ, ট্রেসার, কে কে জাতের উচ্চ ফলনশীল বীজের চারা উৎপাদন করছেন।

চাষি আবুল হাশেস জানান, এখানকার কমপক্ষে ১০০ পরিবার কপি চারা উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, এখানে কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার বেশি বীট রয়েছে। যেখানে চারা উৎপাদনের জন্য চাষি বিশেষভাবে জমি তৈরি করেন। প্রতিটি বীটে কমপক্ষে ৪-৫ হাজার চারা গড়ে উৎপাদন হয়।

স্থানীয় সমেষপুর গ্রামের মোতাহের, হাশেম, কাসেম, আনোয়ার, রাসেল, মোবারক, ইকবাল, মিন্টুসহ একাধিক চাষি রয়েছেন যাদের প্রত্যেকেরই ৫০ থেকে ১৫০টি করে বীট রয়েছে। এ থেকে প্রতিটি কৃষক বিপুল অঙ্কের টাকা আয় করেন। তারা আরো জানান, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এসে তাদের বাজারজাতকৃত বীজ সরবরাহের পাশাপাশি চারার গুণগত মান ও উৎপাদিত ফসলের বিষয়েও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।

এ এলাকায় শুধুমাত্র কপি চারাই উৎপাদন হয় না, এখানে টমেটো, মরিচ লাউ, কুমড়ার চারাও উৎপাদন করা হয়।

তবে সরকারি কৃষি কর্মকর্তারা এসে কাগজে লিখে নিয়ে গেলেও কখনোই কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।

বিষয়টি জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী পরিচালক তারেক মাহমুদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উপজেলা লেভেলোর লোকজন ওই এলাকায় যান। বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে। তবে যেনে ভালো লাগল যে এখন থেকে আমি নিজে এলাকাটিতে যাব, কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close