পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় নরসিংদীর শীতলক্ষ্যা

শিল্পকারখানার কেমিক্যাল, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ময়লা, গৃহস্থালির আবর্জনাসহ প্রায় সব ধরনের বর্জ্য ফেলায় দূষিত হয়ে পড়ছে শীতলক্ষ্যার পানি। প্রতিনিয়ত নদী ভরাট করে বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদীর প্রবাহ। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌরসভায় অবস্থিত ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও নতুন বাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এদিকে শীতলক্ষ্যার দূষিত পানি এক স্থানীয়দের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ, ঘর-গৃহস্থালি কাজসহ কৃষি কাজেও ব্যবহার উপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে পলাশ উপজেলাসহ গাজীপুরের অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে এই নদীর পানি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, কোনো কাজে ব্যবহারের চিন্তা করা তো দূরের কথা, দেখলেই ভয় পেতে হয়। এই পানি হাতে বা শরীরে লাগলে চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায়ই বেশি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যার আশেপাশে অবৈধভাবে ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। নদীর দুইপাশেই অবস্থিত বহু ক্যামিকেল ও শিল্প কারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে অপরিশোধিত রাসানিক বর্জ্য ও দূষিত আবর্জনা প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে নদীতে। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সময় ক্ষমতাশীনদের ছত্রছায়ায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী ভরাট, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন-বিক্রিসহ নদী দখল করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীটি একসময় ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি। নদীপথে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা ছিল এই নদীর। নদীপাড়ের কৃষি জমিগুলো ছিল ফসলে ভরা। নদীতে ছিল নানা প্রজাতির মাছ। চিতল, রুই, কাতল, মৃগেল, পাবদা পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাড়ে অবস্থিত শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষিত হয়ে কালচে হয়ে গেছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। আর বেকার হয়ে পড়েছে অইেশ জেলে পরিবার। কেননা, একটা সময় ছিল এখানকার জেলেরা শীতলক্ষ্যায় মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অবৈধ দখল আর বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে এখন আর নদীটিতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না। ফলে জেলেরা হয়ে পড়ছে বেকার। কৌশল হিসেবে স্থানীয় কিছু লোকজনদের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে কারখানাগুলোতে। ফলে চাকরি নির্ভরতা কারণে স্থানীয়রাও তেমন কিছু বলছেন না।

তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় পরিবেশবিদ, সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নদী রক্ষায় আন্দোলন করেছে, সংশ্লিষ্টদের কাছে নদী রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের নীতি-নির্ধারকগণ এই ব্যাপারগুলোর প্রতি উদাসিত থেকেছেন। ফলে প্রতিনিয়ত দখল-দূষণের মারা যাচ্ছে শীতলক্ষ্যা। পরিবেশ দূষণের মাত্রা আশষ্কাজনক হারে বাড়ায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটও দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করছে।

পলাশ বাজার ঘাটে নৌকার মাঝি কালাম মিয়া বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত এই ঘাটে নৌকা চলাই। কিন্তু পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এত দূষিত ছিল না। পানির এখন যেই অবস্থা তাতে নৌকা চালাতেও ভয় করে।

বাঁচাও শীতলক্ষ্যা নদী আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহবুব সৈয়দ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য ও দখলে নদীর পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। শিল্পায়নের নামে নদী দখলের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ঘটনা বিন্দু বিন্দু করে সঞ্চিত হয়ে দেশের নদ-নদীর জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। আজ থেকে ৫০ বছর পরের চাহিদা ও বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে নদ-নদীর পানি রক্ষা করতে হবে। একটা সময় আসবে যখন দেশজুড়ে জনপদ-নগরগুলোর বিপুল পানির চাহিদা পূরণ করতে হবে নদীগুলো থেকে। কারণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিপজ্জনক মাত্রায় অনেক নিচে নেমে গেছে। শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারীসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে নদী রক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি-চেতনা ও দায়বদ্ধতায় পারে দেশের নদীগুলোকে বাঁচাতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close