আল-আমিন মিয়া, পলাশ (নরসিংদী)

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসক ও ওষুধ সংকট ভোগান্তিতে রোগীরা

* ৩১ শয্যার হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও জনবলের অভাবে চালু হয়নি এখনো। * সাত চিকিৎসকের বিপরীতে আছেন পাঁচজন

নরসিংদীর পলাশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটি চলছে নানা সংকট ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে। ৩১ শয্যার এই হাসপাতালটিতে আছে মাত্র ৫ জন ডাক্তার। চিকিৎসা সরঞ্জামের বেশির ভাগই নষ্ট। পর্যাপ্ত ওষুধের অভাব থাকায় সেবা নিতে আসা অনেকে রোগি বাধ্য হয়ে অন্যত্র যাচ্ছেন। নানামুখি এসব সংকট নিয়ে চলছে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

স্থানিয় সূত্রে জানা যায়, ৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে প্রায় ৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পলাশ উপজেলার লোকসংখ্যা প্রায় ২১২৬১২ জন। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরতদের ধরলে উপজেলাটিতে বসবাসরত লোকের সংখ্যা প্রায়ই ৫ লাখ। এত লোকের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র ছাড়া আর কোন চিকিৎসালয় নেই। স্থানীয়রা বরং এই হাসপাতালে আসার চেয়ে জেলা সদর অথবা নদী পার হয়ে কালীগঞ্জসহ বাইওে সেবা নিতে আগ্রহী।

১৯৯৩ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা কমপ্লেক্স হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। পরে হাসপাতালটিতে ২০১৩ সালে ভেতরে ৫০ শয্যার আরো একাট ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খাঁন দিলিপ। ভবন নির্মাণ শেষ হলেও মন্ত্রণালয়ের আদেশ না পাওয়ায় এবং লোকবলের অভাবে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে এটি এখনো চালু করা হয়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যার এই হাসপাতালে নিয়ম অনুযায়ী পদ থাকার কথা ৭ জনের। কিন্তু আছে ৫ জন। ২ জন মেডিক্যাল অফিসার এবং কনসালটেন্ট ২ জন। আর আছেন একজন আয়োর্বেদিক চিকিৎসক। কিন্তু এ ৫ জন চিকিৎসকও নিয়মিত হাসপাতালে থাকেন না। তারা বেশির ভাগ সময়ই প্রাইভেট ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গত ২৫ বছরে মাত্র দুজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে শূন্য। ৮ বছর আগে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা কাজী শামীম হোসেন দায়িত্বভার গ্রহণের প্রায় ৩ মাসের মাথায় তাকে সিভিল সার্জন হিসেবে পদান্নতি দিলে পদটি শূন্য হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মাজহারুল হক নামের একজন চিকিৎসককে আরএমও এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকেও ৫ মাসের মাথায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে চিকিৎসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শিশুবিষজ্ঞ, অর্থোপেডিকস, চর্ম, চক্ষু, নাক-কান-গলা বিভাগই এখানে নাই। অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারি বিভাগে কোন ডাক্তার নাই। এ সকল বিভাগের রোগীরা আসলে মেডিক্যাল অফিসাররাই তাদের চিকিৎসা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন বহি:বিভাগে ১০০ থেকে ১৫০ রোগী আসেন এই হাসপাতালে। আর জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসেন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ রোগী। হাসপাতালের রঙিন-রসনি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে। রেডিওলজিস্টও নাই। ইসিজি মেশিন নষ্ট। আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন আছে কিন্তু সনোলজিস্ট নেই। অস্ত্রপাচারকারী নাই। এমন রোগী আসলে তাদেও রেফার্ড করে নরসিংদী অথবা ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র মাইনর অপারেশনগুলো করা হয়। হাসপাতালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য সুইপার থাকলেও ওয়ার্ডবয় এবং আয়া নাই। ৬ টি পদের মধ্যে মাত্র ৩ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছে। নার্স আছে ২৭ জন। জরুরি বিভাগে প্রায় প্রতিদিনই টিকেট কেটে ডাক্তার দেখান ২০০ থেকে ২৫০ নারী-পুরুষ। ব্যবস্থাপত্রে ৮ ধরণের ওষুধের নাম লেখা থাকলেও হাসপাতালের পক্ষ থেকে তেমন কোন ওষুধ দেওয়া হয় না।

তবে ওষুধ সংকটের কথা অস্বীকার করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আল-বেলাল। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, চিকিৎসক, কর্মচারী ও রোগীদেরকে সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মেশিন-সরঞ্জামগুলোর সমস্যা এবং সংকট রয়েছে। কিন্তু কোন ওষুধের সংকট নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close