প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ আগস্ট, ২০১৮

জমজমাট কোরবানির পশুর হাট

দেশি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে দেশের উপজেলার কোরবানির পশুর হাট। গত ৮-১০ দিন থেকে গবাদি পশুর বাজার শুরু হলেও গত রোববার থেকে গরুর বাজার জমে উঠেছে। প্রত্যেক হাট বাজারে বিপুল পরিমাণ গরুর সঙ্গে ছাগলও বিক্রি হচ্ছে। অস্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ গবাদি পশুর বাজারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। স্থান বিশেষে সকাল থেকে সারা দিন বাজার চলছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে উপজেলার আওতাধীন অনেকে মৌসুমি গরু ও ছাগলের ব্যবসা শুরু করেছে।

বিক্রেতারা কাক্সিক্ষত দাম পাওয়ার আশায় পশু নিয়ে ছুটছেন হাট থেকে হাটে। অধিক লাভের আশায় হাট ইজারাদাররা মাইকিং করে অতিরিক্ত পশুর হাট বসাচ্ছেন। গরু বিক্রেতারা বলছেন, দেশীয় গরুও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে দামও রয়েছে সাধ্যের মধ্যে। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গরুর বাজার জমে উঠবে। তবে ক্রেতারা বলেছেন, দেশি গরুর বিকল্প না থাকায় বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। শেষ মুহূর্তে পশুর দাম কমার আশা তাদের। এদিকে অবৈধপথে গরু আমদানি না হলে ঈদের আগে এসব গরু ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কৃষকদের রয়েছে বলে মনে করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর সদর উপজেলার হাটগুলো এখন কোরবানির পশু বেচাকেনায় জমজমাট। জেলায় অনুমোদিত পশুর হাটসহ ২৫-৩০টি স্পটে কোরবানির পশু কেনাবেচা চলছে। এসব হাটে ৩৫ হাজার থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকায় এবং তার বেশি মূল্যের পশু বেচাকেনা হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী উপজেলার রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া থেকে ট্রলারে পশু বিক্রি করতে আসা মজিবুর রহমান ও নসু মিয়া বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজস্বভাবে পালন করা গরু সংগ্রহ করে ট্রলার ও পিকআপে করে জেলার বিভিন্ন হাটে পশু বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসি এবং প্রতি হাটে ক্রেতাদেরও ভালো সাড়া পাচ্ছি।

কোরবানির পশু কিনতে আসা আলমগীর হোসেন, ফজলুল হক ও জামাল হোসেন জানান, ভালো জাতের ও রোগমুক্ত কোরবানির পশু কিনতে এসেছি। মোটামুটি সামার্থ্য অনুযায়ী পছন্দমতো পশু পেলেই কিনব।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার তালগাছী, বোয়ালিয়া, কালিয়া কান্দাপাড়া, শালুয়াভিটা, রতনকান্দি, পাঙ্গাসিহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সাড়া বছর গরু ছাগলের ক্রয়-বিক্রয় করা হলেও আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জমে উঠেছে পশুর হাট।

বিক্রেতা মাসুদ আলী জানায়, এবার আমি একটি ষাঁড় বিক্রি করেছি ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। রাজধানী থেকে আসা ব্যবসায়ী বেলাল জানান, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার হাট বাজারের অবস্থা অত্যন্ত ভালো।

হাট ইজারাদার রুবেল মন্ডল বলেন, ঈদকে সামনে রেখে বেশ ভালোই হাট জমে উঠেছি। দেশি গরু আমদানিও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ব্যাপারি আসছে তেমনি অনেক বেশি ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, হাটে হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে কোরবানির পশু কেনাকে ঝামেলা মনে করে অনেকে স্থানীয় খামারগুলো থেকে সরাসরি গরু কিনছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ক্রেতারা। প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ছোট-বড় শতাধিক খামারে তিন হাজারের অধিক গবাদি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. বি এম জাফর আহমেদ জানান, নবাবগঞ্জে গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর ঔষধ ব্যবহারের প্রবণতা নেই বললেই চলে। এজন্যই অধিকাংশ লোকজন খামারগুলো থেকে গরু কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার আমতলীতে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানিকৃত গরু দিয়ে চাহিদা পূরণ করা হয়। কিন্তু চলতি বছর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোরবানির অতিরিক্ত পশু আসায় বাজারে দাম কমে গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা। খামারিদের ধারণা অনেক গরু এ বছর অবিক্রীত থেকে যাবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় কোরবানির জন্য ৪ হাজার ৭৪০টি পশুর চাহিদা রয়েছে। এ দুই উপজেলার ৩৯০টি খামারে ৩ হাজার ১০৫টি পশু আছে।

দক্ষিণাঞ্চলের বড় গরুর হাট আমতলী ও গাজীপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু এসেছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, যশোর, খুলনা ও ঝিনাইদার গরুতে বাজার সয়লাব। খামারিরা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাজারে গরু আসায় গরুর দাম কমে গেছে। অনেক খামারি লোকসানে গরু বিক্রি করছে।

আমতলী গরু হাটের ইজারাদার ও ইউপি চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পশুতে কোরবানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। পশুর দাম সহনশীল অবস্থায় রয়েছে।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার আওতাধীন ১৪টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভায় শতাধিক অস্থায়ী গবাদি পশুর বাজার বসেছে। উপজেলা উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শা শিকারপুর, বাথুয়া, পূর্বধলই, ফরহাদাবাদ, এনায়েতপুর প্রভৃতি এলাকায় গরুর স্থায়ী খামার গড়ে তুলেছে অনেক উদ্যোক্তা। কিছু কিছু ব্যবসায়ী উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন স্থান, পাবর্ত্য জেলা ও টেকনাফ থেকে গরু ক্রয় এনে বিক্রির জন্য বিভিন্ন গরু বাজারে তুলেছে। উপজেলার আমান বাজার, মদুনাঘাট, চৌধুরীহাট, মনিয়াপুকুর, নাজিরহাট এলাকায় গরুর সবচেয়ে বড় শোরুম স্থাপন করা হয়েছে।

উপজেলার সরকারহাট বাজারের আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি এ বাজারে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত গরুর দাম হাকা হয়েছে বলে জানান। পৌরসভার মিরেরহাট বাজারে গরু ক্রয় করতে আসা মো. রহিম উদ্দিন জানান, বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে। কিন্তু দাম খুব চড়া।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বৃহৎ পশুর হাট আদমপুর বাজারে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় চলতি কোরবানির জন্য পশুর দাম অনেক কম থাকায় ক্রেতারা পশু কিনছেন অতি আনন্দে।

আদমপুর বাজার পশুরহাটে মান্নান মিয়া ও রাহেল মিয়া নামে ক্রেতা জানান, ঈদের এখনও বাকি রয়েছে। দামে দরে মিললে হয়তো কিনতেও পারি। মাহবুবুল আলম নামে এক গরু বিক্রেতা জানান, এখনও বাজারে গরু বেচা-কেনা তেমন হচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে গরু বেচাকেনা জমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়াও এবারের ঈদে ভারতীয় গরু না আসলে দেশীয় গরুর খামারিরা লাভবান হবে বলে তিনি জানান।

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোর সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কেশবপুর ও সরসকাটি পশুহাটসহ উপজেলার সাতবাড়িয়া, চিংড়া, বগা, ভান্ডারখোলা বাজারসহ মোট ৬টি পশুর হাট বসেছে। প্রতি বাজারের দিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতাদের জমজমাট বেচা-বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা সদরের পশুহাট মালিক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে ২ হাজার গরু বিক্রি হচ্ছে। ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা দামের গরু বাজারে এসছে। শেষ মুহুর্তে আরো বেশী পশু বিক্রি হওয়া এবং বাজার আরো জমজমাট হওয়ার আশা করছেন তিনি।

কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আব্দুল্যাহ সাংবাদিকদের জানান, ঈদ উপলক্ষে গোটা কেশবপুরে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। এছাড়া হাট বাজার থেকে মানুষ যাতে নিরাপদে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন সে দিকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।

রানীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ত্রিমোহানী ও আবাদপুকুর হাট। দেশের প্রতিটি স্থানে এবার গরুর পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় উপজেলার হাটগুলোতে এখনো বহিরাগত ব্যবসায়ীদের আগমন তেমন ঘটেনি। তবে বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকে সকল প্রকার গো খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে উপজেলার খামারি, গরু ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তবুও ঈদে গরু বিক্রেতারা লাভের আশা করছেন।

আবাদপুকুর হাটের ইজারাদার শ্রী সুনিল কুমার সাহা ও ত্রিমোহানী হাটের ইজারাদার মো. বেদারুল ইসলাম বলেন, এবার ত্রিমোহনী হাটে প্রচুর গবাদী পশুর আমদানি হচ্ছে এবং দামও অনেকটা কম। তাই ক্রেতারা তাদের সাধ্যের মধ্যে কোরবানীর জন্য পছন্দ মতো পশু কিনতে পারছেন।

পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, শেষ মুহূর্তে জামে উঠেছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাংশা পুরাতন বাজারের পশুর হাট। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের গবাদি পশুতে পূর্ণ হয়ে ওঠেছে। সেই সঙ্গে ঘটেছে ক্রেতা-বিক্রিতার সমাগম।

বিক্রিতা আব্দুল করিম, কামাল হোসেন এবং আব্দুল কালাম আজাদ জানান, দেশি জাতের ছোট গরুর প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বেশী। গরুর পাশাপাশী অনেক ক্রেতাই আবার পছেন্দের মহিষ এবং ছাগল ক্রয় করছে।

বাজার কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর মন্ডল এবং পশু হাটের ইজাদার সোরাফ হোসেন জানান, যাতায়াত অবস্থ্যা ভাল এবং পশু হাটের নিরাপত্তার জোরদার করায় অনেক দূর হতে অনেক ক্রেতা-বিক্রিতারা এই বাজারে তাদের পছেন্দের গরুটি ক্রয়-বিক্রিয় করতে এসেছে।

রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরে এ বছর দাম স্বাভাবিক থাকায় গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা ।

পূর্ব স্বরমঙ্গল থেকে আব্দুল কুদ্দুস বেপাড়ী জানায়, হাটে ৪০ হাজার থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দামের গরু উঠছে। ব্যবসায়ীরা এ বছর গরুর মূল্য বেশি চাওয়ার কারণে ক্রেতারা দরদাম করতে হিমশিম খাচ্ছে। আস্তে আস্তে হাটে ক্রেতা বাড়ছে আর ব্যবসায়ীরা চরা দাম চাচ্ছে। হাটের ইজারাদার আব্দুল হক বেপারির সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রচ- গরমের কারণে দুপুরে বেচাকেনা একটু কম হলেও, বিকালে বেচা কেনা বাড়বে বলে আশা করি। রাজৈর পৌর মেয়র শামীম নেওয়াজ জানান, বৃহত্তর টেকেরহাটে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর পরিমান গরু আশে ও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাট ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close