মেহেরপুর প্রতিনিধি

  ১৪ আগস্ট, ২০১৮

মেহেরপুরে শতকোটি টাকার ব্ল্যাকবেঙ্গল বিক্রির সম্ভাবনা

ছাগলের গলার রশির অপর প্রান্তে শক্তহাতে ধরে থাকা তারা কেউ বেপারি আবার কেউবা পারিবারিক উদ্যোগে পালিত ছাগলের মালিক। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মেহেরপুর জেলা সদরের চুয়াডাঙ্গা সড়কের বারাদিতে ছাগলের হাটের চিত্র এটি। হাটে মানুষের চেয়ে ছাগলের সংখ্যা বেশি। ছাগল আর মানুষে একাকার এখানে। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় এটিই সবচেয়ে বড় ছাগলের হাট। এখানে সপ্তাহের শনি ও বুধবার ছাগলের হাট বসে। দ্রুত প্রজননশীলতা, উন্নত মাংস, মাংসের ঘনত্ব ও উন্নতমানের চামড়ার জন্য ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল বিশ্ববিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা মেহেরপুরের বারাদিতে ছাগলের এ হাট থেকে ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল কিনে নিয়ে যায়।

হাটে ব্যতিক্রম দেখা গেল অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভেড়া। কিন্তু গলায় কোনো রশি নেই। একদল ভেড়ার মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বড় ভেড়াটিকে ধরে রাখলেই তাকে ঘিরে থাকে অন্য ভেড়ারা। তিনি হারিয়ে গেলেও ভেড়ারা রশির ভেড়াকে ঘিরে অবস্থান করবে। এটা ভেড়ার সহজাত ধর্ম।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, মেহেরপুর জেলায় এবার পারিবারিক উদ্যোগে ও বিভিন্ন খামারে পালিত ৬০ হাজার ৪৯০টি ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় ছোট-বড় মিলে ৫৩০ জন খামারি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছাগল পালন করছে। মেহেরপুরের শতকরা ৪৫ ভাগ পরিবার ১টি করে ছাগল পালন করে নিজেদের দুঃসময়ে আপদকালীন অর্থনৈতিক চাহিদা মেটিয়ে থাকেন।

পারিবারিক উদ্যোগে পালিত ও খামারিরা ইতোমধ্যে কোরবানি উপযোগী ছাগল বাজারজাত করতে শুরু হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে গত ৭ আগস্ট বারাদি ছাগলের হাটে গিয়ে দেখা যায় প্রায় চার হাজার ছাগল আনা হয়েছে।

আলমপুর গ্রামের ছাগলের বেপারি কমর উদ্দিন ৪০ কেজি করে মাংস হবেÑএমন দুটি খয়েরি রঙের ছাগল হাটে তুলেছেন। ছাগল দুটি ঢাকার এক বেপারির কাছে তিনি ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। জোড়া ছাগল ক্রেতা রুহুল কুদ্দুস জানান, মাংস হিসাব করে ছাগল দুটি কেনা হয়নি। কোরবানিতে এমন ছাগলের চাহিদার কারণেই তিনি কিনেছেন। ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় ছাগল দুটি চিটাগাং বাজারে বিক্রির আশা করছেন তিনি।

বারাদি ছাগলের হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি হাটে এক-দেড় হাজার ছাগল বিক্রি হয়। ঈদ সামনে রেখে প্রতি হাটে আড়াই থেকে তিন হাজার ছাগল বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ছাগলের জন্য ২৫০ টাকা ইজারা নেওয়া হয় ক্রেতার কাছে।

‘গরিবের গাভী’খ্যাত মেহেরপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম উৎস এই ব্ল্যাকবেঙ্গল। মেহেরপুরের পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা এই ব্ল্যাকবেঙ্গলকে জেলার ব্র্যান্ডিং করেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মেহেরপুরের ব্ল্যাকবেঙ্গলের মাংস সুস্বাদু। এ বছর ব্যক্তি উদ্যোগে ও ৫৩০টি খামারে ৬০ হাজার ৪৯০টি ছাগল কোরবানি উপযোগী করে রাখা আছে। গড়ে ১৬ হাজার টাকা করে হলেও এবার ঈদে এক শ কোটি টাকার ছাগল বেচাকেনা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close