রফিকুল ইসলাম রাজা, শিবচর (মাদারীপুর)

  ১৪ আগস্ট, ২০১৮

কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুট

এক সপ্তাহেও কাটেনি ফেরির অচলাবস্থা

* ফেরি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে * কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ট্রাকের দীর্ঘ সারি * বিড়ম্বনায় পড়বে ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রী

এক সপ্তাহেও কাটেনি মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা। সীমিত আকারে পরিবহন নিয়ে কে টাইপ ছোট ফেরি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কাঁঠালবাড়ী লৌহজং চ্যানেলে নাব্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় পাঁচ দিন ধরেই রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রাখছে বিআইডব্লিউটিসি। ফলে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে পাড়ের অপেক্ষায় ট্রাকের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, কাঁঠালবাড়ী লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে উজানে নদীভাঙন ও পলি মিশ্রিত পানি আসার বিকল্প চ্যানেল ও তার মুখে দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বলে ফেরি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।

কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাট সূত্র জানায়, শিমুলিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ এবং ২ শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করে। নাব্য সংকটে ছয়টি ডাম্প ফেরি ও ৩টি রো রো ফেরি চলাচল করতে পারছে না। এখন দুইটি ভিআইপি ফেরিসহ ৫ থেকে ৬টি ফেরি কোনো মতে চলাচল করছে।

এদিকে বিকল্প চ্যানেলে ৮ কিলোমিটার নৌপথেই নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ফেরি চলাচলে বিঘœ হলে ঈদুল আজহায় ঘরে ফেরা মানুষ পরিবারের সঙ্গে নির্বিঘেœ ঈদ উপভোগ হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া গত কয়েক দিনে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার কারণে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এখন প্রায় ৫ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ঈদের সময় ট্রাক পারাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে এসব ট্রাক আরো ১৫ দিনেও পার হতে পারবে না বলে ধারণা করছেন চালকরা।

ঘাটে আটকাপড়া ট্রাকের চালকরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা ঘাটে এসে পদ্মা পাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। ফেরি পার হতে পারছি না। আর কবে যে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারে না।

সব বড় বড় রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে পদ্মা নদী লৌহজং চ্যানেলের মুখে ও বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে বলে গাড়ির চালকরা জানান। কিন্তু স্থানীয় বিআইডব্লিউটিএ’র অব্যাহত ড্রেজিং এ সন্তুষ্ট হতে পারছে না।

কাঁঠালবাড়ী ঘাটের ইজারাদার ইয়াকুব বেপারী জানান, বিআইডব্লিউটিএ গত প্রায় এক মাস ধরে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌ রুটে নাব্য সংকট দূর করতে ড্রেজিং করা হচ্ছে। কিন্তু ড্রেজিংয়ের নামে কিছু হচ্ছে না। তাই আসন্ন ঈদে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ঘাট দিয়ে যাত্রীরা অনায়াসে পারাপার হতে পারবে কিনা বলা যায় না। সেজন্য নদীর ড্রেজিং কাজে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব প্রদানের দাবি জানান। তা না হলে আর কয়েক দিন পর এ রুটের লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

কাঁঠালবাড়ী ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন জানান, এবার বর্ষা মৌসুমে নাব্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ফেরিসহ নৌযান চলাচলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এরই মধ্যে রো রো ফেরিগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে যাতে নৌযান চলাচলে কোনো রকম সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য চ্যানেলটি সচল রাখার ৭টি ড্রেজার দিয়ে বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। নাব্য সংকট থাকলেও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চ্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচলে উপযোগী রাখার আশ্বাস।

শিবচর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, ঈদুল আজহায় যাত্রীরা যাতে প্রিয়জনের সঙ্গে নির্বিঘেœ ঈদ উপভোগ করতে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে উদ্ধারকারী জাহাজ এরই মধ্যে ঘাটে আনা হয়েছে।

এদিকে গত শনিবার বিকালে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ঘাট অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঘাট পরিদর্শনে আসা বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান এম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, একে তো বর্ষা মৌসুম, তারপর আবার ¯্রােতে প্রচুর পলি জমে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরও যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।

জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রীরা যাতে প্রিয়জনের সঙ্গে নির্বিঘ্নে ঈদ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য জেলা প্রশাসক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবে। মাদারীপুর পুলিশ সুপার সুব্রত হালদার বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবার ঈদে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close