মো. শাহ আলম, খুলনা ব্যুরো

  ১১ আগস্ট, ২০১৮

বালুর ট্রাকে বিধ্বস্ত খুলনার শৈলমারী ওয়াপদা সড়ক

দুর্ভোগে ৮ গ্রামের মানুষ

বালুবাহী ট্রাকের ভারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শৈলমারী ওয়াপদা বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার সড়ক। অবৈধ একাধিক বালু বেড (বালু রাখার স্থান) থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক চলাচল করায় কৈয়াবাজার থেকে শৈলমারী ট্রলার ঘাট পর্যন্ত সড়কটি মানুষ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ সড়কের ব্যবহারকারী পাশের আটটি গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হালকা যানবাহন এবং উল্লিখিত সড়ক লাগোয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এ বালু ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি সম্পৃক্ত। তারা স্থানীয় জলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খোলার সাহস পান না।

এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধ বালু বেড বন্ধ করে দুর্ভোগের হাত থেকে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বটিয়াঘাটা উপজেলার শৈলমারী ট্রলার ঘাটকেন্দ্রিক বালু ব্যবসার একাধিক অবৈধ বেড গড়ে উঠেছে। রূপসাসহ বিভিন্ন বালু মহল থেকে উত্তোলিত বালু নৌযানে করে শৈলমারী ট্রলার ঘাটে আনলোড করা হয়। এরপর সেখান থেকে মিন্টু শিকদার, অরূপ, জাহাঙ্গীর ও সত্যজিৎ চন্দ্র চন্দসহ অন্য ব্যবসায়ীরা স্ব-স্ব বেডে নিয়ে বালু বিক্রি করে থাকে। মূল সড়কের ওপর ভারী ট্রাক রেখে এক্সাভেটর দিয়ে বালু লোড করায় সড়কের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এসব ব্যবসায়ীর বালুভর্তি ট্রাক আসা-যাওয়ার কারণে সড়কটি জনমানব চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে এ সড়কের ওপর নির্ভরশীল পাশের হোগলবুনিয়া, ছয়ঘরিয়া, বদনাখালী, হাটবাড়ি, দশ শৈলমারী, পাথুরিঘাটা, জয়পুর ও শৈলমারী গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এ ছাড়া উত্তর শৈলমারী দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড নামক একটি ওষুধ কোম্পানির যানবাহন চলাচলও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ১০৮ নম্বর উত্তর শৈলমারী দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার বৈরাগী ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভানেত্রী রেক্সোনা বেগমসহ ৭০ গ্রামবাসী স্বাক্ষরিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের ওপর অবৈধভাবে বালু ব্যবসার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তাদের নাকে-মুখে বালু ঢুকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। ট্রাক চলাচলের সময় বালু উড়ে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। ফলে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে ট্রাক চলাচলের কারণে শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য সড়কে চলাচল করাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয় আবেদনে।

অন্যদিকে এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক কোম্পানির সিনিয়র ম্যানেজার আবুল কাশেমের স্বাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী সড়কটির দুপাশ বালুর বেড হিসেবে ব্যবহার এবং সড়কের ওপর গাড়ি রেখে লোড করায় সড়কটি ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সড়কটি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যানবাহন চলাচলেও প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সড়কটির সঠিক সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।

শৈলমারী পানি ব্যবস্থাপনা দলের সাধারণ সম্পাদক হরিপদ মল্লিক বলেন, সড়কটি দিয়ে ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে স্থানীয় আটটি গ্রামের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে। এমনকি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও সড়ক দিয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স, ভ্যান বা অন্য কোনো হালকা যানবাহন ব্যবহার করে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীকে অবহিত করা হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

বালু ব্যবসায়ী, বেড মালিক সত্যজিৎ চন্দ্র চন্দ বলেন, তিনি অল্প কিছুদিন ব্যবসা করছেন। তবে, মিন্টু, অরূপ ও জাহাঙ্গীর অনেক বছর ধরে এ ব্যবসা করছে। ট্রাক চলাচলের কারণে বর্ষার সময় একটু সমস্যা হয়। তবে, সড়কটি পিচ ঢালাইয়ের জন্য এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করা হয়েছে।

জলমা ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান আশিক বলেন, বালুর ট্রাকের কারণে সড়কটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তিনি তিন মাস আগে উপজেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে, পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বালু বেড মালিকদের নোটিস করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনা জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে ভারী ট্রাক চলাচল করায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close